পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির পরোয়ানা: গ্রেপ্তার হবেন পুতিন?
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। শুক্রবার (১৭ মার্চ) এ পরোয়ানায় পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হচ্ছে ইউক্রেনে রাশিয়া যেসব অঞ্চল দখল করেছে সেখান থেকে হাজার হাজার শিশুকে জোর করে উচ্ছেদ ও উদ্বাস্তু করা হচ্ছে। রাশিয়ায় এসব শিশুদের জোর করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামানো হচ্ছে।
অভিযোগ আছে পুতিনের নির্দেশেই এমনটি করা হচ্ছে। শুধু পুতিনই নন তাঁর কার্যালয়ের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া অ্যালেক্সিয়েভনা লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এর পরপরই প্রতিক্রিয়া দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিরি জেলেনস্কি। রাজধানী কিয়েভে রাতে দেয়া এক ভাষণে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি তাঁর দেশের ১৬ হাজারেরও বেশি শিশুকে এ পর্যন্ত ইচ্ছের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ-উৎখাত, স্থানান্তর ও উদ্বাস্তু করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্ট জো বাইডেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিকে ন্যায়সঙ্গত অভিহিত করে বলেছেন পুতিন স্পষ্টভাবেই যুদ্ধাপরাধ করেছেন ।
তাঁর এরপরের কথাটি সবচে গুরুত্বপূর্ণ। বাইডেন বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে কেউ এটিকে স্বীকৃতি দেয়নি, আমরাও দেইনি। তবু এটা একটা খুব শক্ত পদক্ষেপ।
এতসব কাণ্ডের পর প্রশ্ন উঠেছে এই পরোয়ানার গুরুত্ব কতটা? সত্যিই কি গ্রেপ্তার হবেন পুতিন বা তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে? আন্তর্জাতিক আদালতে তোলা যাবে তাকে?
১৯৯৮ সালে ১২০টি দেশ ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ‘রোম সংবিধি’ নামে একটি চুক্তিতে সই করে। ওই চুক্তি অনুসারে ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১২৩টি দেশ রোম চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কার্যক্রমকে অনুমোদন দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র , রাশিয়া, চীন এমনকি অভিযোগকারী ইউক্রেনও এই আইসিসির সদস্য নয়। রাশিয়াও এটিই বলছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘আইসিসির এই সিদ্ধান্তের কোনো মূল্য নেই আমাদের কাছে । আইনিভাবেও এর কোনো মূল্য নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয় রাশিয়া। এর অধীনে চলার কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই।’
তবে আইসিসির প্রেসিডেন্ট পিওতর হফমানস্কি বলেন, ‘রোম চুক্তি অনুমোদন করেনি রাশিয়ার এমন ব্যাখ্যা সর্ম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ দেশ রোম সংবিধির অংশ। এই চুক্তি অনুমোদনকারী এমনকি এই আদালতের বিচারকাজের স্বীকৃতি দেয়া যে কোনো সদস্য দেশের অভ্যন্তরে হওয়া অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার আছে আদালতের।’
ইউক্রেনও ২০১৪ এবং ২০১৫ তে দু’বার আইসিসির কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেয় উল্লেখ করে হফমানস্কি বলেন ‘অপরাধী যে দেশই হোক না কেন নভেম্বর ২০১৩’র পর থেকে ইউক্রেনের ভূখন্ডে যে কারো ওপর
সংঘটিত অপরাধের বিচার করবে আদালত।’
তবে আদালতের কাঠগড়ায় পুতিনকে নেয়া আপাতত অসম্ভবই বটে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাধা কোথায়?
‘পুতিনকে আদালতে নিতে হলে রাশিয়ায় ক্ষমতার পরিবর্তন হতে হবে’ মনে করেন নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সিসিলি রোজ। আদালতের নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই যারা এই পরোয়ানা অনুসারে পুতিনকে গ্রেপ্তার করবে। ইউক্রেন আদালতের কার্যক্রমের স্বীকৃতি দিলেও রোম সংবিধি চুক্তিতে সই করেনি।
রাশিয়া তার কোনো নাগরিককেই এখন পর্যন্ত কোনো দেশে বা কারো হাতে তুলে দেয়নি বা হস্তান্তর করেনি। পুতিনকেও করবে না রাশিয়া বলাই বাহুল্য। অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ হয় না এই ট্রাইব্যুনালে। তবে ব্যতিক্রম জোসেফ কোনি। উগান্ডার বিদ্রোহী নেতা ও দেশটির সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লর্ড রেজিসট্যান্স আর্মি-এলআরএ’র প্রতিষ্ঠাতা কোনির অনুপস্থিতেই বিচার চালায় আইসিসি।
আইসিসির বিচারের মুখে বিশ্বের যেসব রাজনৈতিক নেতারা
স্লোবোদান মিলোসেভিচ : সাবেক ইয়োগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট। যুদ্ধাপরাধ ও মনবতাবিরোধী অপরাধে ২০০২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তার বিচার শুরু হয়। চারবছর বিচার চলাকালীন ২০০৬ সালেই বন্দি অবস্থায় তার মৃত্যু হয়
রাদোভান কারদজিচ: সাবেক সার্বিয়ান নেতা। ১৯৯৫ সালে বসনিয়ায় ৭ হাজারের বেশি মুসলিমকে হত্যার দায়ে কারদজিচকে ৪০ বছরের সাজা দেয় আইসিসি। ২০০৮ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাটকো ম্লাদিচ: ২০১৭ সালে সার্বিয়ার সাবেক সেনাপ্রধানকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়। বসনিয়ায় গণহত্যার দায়ে ২০১১ সালে তার বিচার শুরু হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে।
চার্লস টাইলর: লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস টাইলরকে সিয়েরা লিওনে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ চালানোর দায়ে ২০১২ সালে ৫০ বছরের যাবজ্জীবন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। ২০০৬ সালে টাইলরের বিচার শুরু করে আদালত।