মেসির ৮০০ গোলের মাইলফলকের ম্যাচে আর্জেন্টিনার জয়
কাতার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথমবার মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ঘিরে বুইয়েন্স আইরেসের এল মনুমেন্তাল জুড়ে বয়ে যায় উচ্ছ্বাসের বন্যা। ভক্তদের উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে গিয়েছিল লিওনেল মেসিদেরও। ক্যামেরায় ধরা পড়ে মেসি-মার্টিনেজদের ছলছল চোখ। ডাগআউটে কোচ লিওনেল স্কালোনিরও যেন আবেগি হয়ে গিয়েছিলেন। এমন দিনে চোখ জুড়ানো ফ্রি কিকে ক্যারিয়ারে ৮০০তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন লিওনেল মেসি। পানামার বিপক্ষে আর্জেন্টিনাও তুলে নিয়েছে দুর্দান্ত জয়।
আজ শুক্রবার (২৪ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সকালে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে পানামাকে ২-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। দলের জয়ের ম্যাচে মেসির পাশাপাশি স্কোরবোর্ডে নাম লিখিয়েছেন থিয়াগো আলমাদা।
আর্জেন্টিনা বনাম পানামার ম্যাচ। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে পানামার খেলা নিয়ে কারও আগ্রহ থাকার কথা না। তুড়িতে উড়িয়ে দেওয়া তো সময়ের ব্যাপার। কিন্তু, আর্জেন্টিনার রাজধানীর মাঠ এল মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামের ৮৩ হাজার দর্শকদের কাছে এই ম্যাচের ফল মোটেই মূখ্য নয়। সব ছাপিয়ে লিওনেল মেসি, ডি মারিয়া, ডি পল, এমি মার্টিনেজদের নতুন জার্সিতে দেখতে পাওয়ার তৃপ্তিটাই আসল। তাই, ৭৮ মিনিটে আলমাদা ও ৮৯ মিনিটে মেসির গোলে পাওয়া আর্জেন্টিনার ২-০ গোলের জয় স্রেফ সংখ্যামাত্র।
এই ম্যাচকে ঘিরে উৎসবের আবহে সেজে ওঠে গোটা আর্জেন্টিনা। দীর্ঘ তিন মাসের অপেক্ষা। জার্সিতে তিন তারকা। আরেকটি তারকা যোগ করতে ৩৬ বছর ধৈর্য ধরতে পারলেও জাদুকর মেসিকে আবার মাঠে দেখতে পাওয়ার লোভ সামলানো বড় দায়! তার উপর বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসি যখন বলেছিলেন, তিন তারকা জার্সিতে খেলার স্বাদটা নিতে চাই, তখন থেকেই শুরু হয় ক্ষণগণনা। এই একটি ম্যাচের টিকিট কিনতে অনলাইনে চেষ্টা করেছিল দেড় মিলিয়ন মানুষ, আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করে ১ লাখ ৩১ হাজার দর্শক। আর দুনিয়াজোড়া ভক্তরা তো আছেই!
গুঞ্জন উঠেছিল ম্যাচটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বীকৃতি পাবে না। মূল দল না খেলানো, প্রধান কোচের বদলে বদলি কোচ আনতে চাওয়া, বেঁধে দেওয়া নিয়মের চেয়ে বেশি খেলোয়াড় বদলাতে চাওয়া- পানামার নানা সমস্যায় শঙ্কা ছিল ফিফার নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে। শেষ পর্যন্ত সেটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বীকৃতিই পেল। সঙ্গে জায়গা করে নিল ইতিহাসের পাতায়। অবশ্য মেসির নেতৃত্বে এই আর্জেন্টিনা দলটাই তো আস্ত এক ইতিহাস। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে গোল করলেন মেসি, দর্শকরা যেন আবারও পেলেন বিশ্বজয়ের স্বাদ। মেসি ছুঁলেন মাইলফলক। স্বীকৃত ফুটবলে ৮০০তম গোল পেলেন ক্ষুদে জাদুকর। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৯৯তম, ক্লাব ফুটবলে গোলসংখ্যা ৭০১।
এল মনুমেন্তালে এদিন ম্যাচের ৫ ঘণ্টা আগেই খুলে দেওয়া হয় প্রবেশদ্বার। দর্শকরা উৎসবের আবহ নিয়ে মাঠে প্রবেশ করে। নেচে-গেয়ে কয়েক দফায় অভিবাদন সেরে মাঠে আসে আর্জেন্টিনা দল। বুইয়েন্স আইরেসের রাস্তায় তখন গণজোয়ার। আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি অপরিবর্তিত রাখলেন বিশ্বকাপ ফাইনালের একাদশ। পুরনো স্বাদটাই দিতে চেয়েছেন বিশ্বজয়ের নতুন বোতলে।
মেসিরা এদিন মাঠে নামেন বিশ্বকাপ জয়কে উদযাপন করতে। বিশ্বজয়ের পর প্রথম ম্যাচ, সেই কবে ৩৬ বছর আগে এমন কিছুর স্বাদ শেষবার নিয়েছিল তারা। ব্যাপারটা অনেকটা এমন, পানামাকে ডেকে আনা হয়েছে কেবল প্রতিপক্ষ প্রয়োজন বলে। ম্যাচে গোল করার চেয়ে উপভোগেই মনোযোগ ছিল খেলোয়াড় থেকে শুরু করে দর্শক সবার। ফলে অসংখ্য সুযোগ পেয়েও দুটোর বেশি গোল আসেনি। মেসি নিজেই মিস করেছেন জোড়া ফ্রি কিক।
খেলা শেষে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ক্লদিও তাপিয়া মাঠে নিয়ে এলেন বিশ্বকাপ। মেসিকে মাঝখানে রেখে বাকি খেলোয়াড়রা দু'পাশে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। এরপর তাপিয়া বিশ্বকাপটা ফের তুলে দিলেন জাতীয় বীরদের হাতে। যা নিয়ে আরেকবার মাতল লিওনেল স্কালোনির দল।