সাভার থানায় হুইল চেয়ার, সহজ হবে প্রতিবন্ধীদের আইনি সেবা
মিজানুর রহমান। প্রতিবন্ধী। চলাফেরা করতে হয় হুইল চেয়ারে। কারও সাহায্য ছাড়াই আজ শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে সরাসরি উপস্থিত হলেন ডিউটি অফিসারের সামনে। নাগরিক সমস্যা নিয়ে জনস্বার্থে সাধারণ ডাইরি (জিডি) করলেন সাভার মডেল থানায়।
মিজানুর রহমানের মতো প্রতিবন্ধী কিংবা বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের কোনো অভিযোগ নিয়ে ডিউটি অফিসার পর্যন্ত পৌঁছাতে এতদিন বড় বাঁধা ছিল থানায় প্রবেশের মুখে থাকা সিঁড়ি। সেই সিঁড়ির একাংশ সংস্কারের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে সুপরিসর চারটি র্যাম্প। সেই র্যাম্প ধরেই হুইল চেয়ারে করে মিজানুরের মতো অন্যান্য শারীরিকভাবে দুর্বল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সেবাপ্রত্যাশীরাও সরাসরি পৌঁছে যেতে পারবেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ডিউটি অফিসারের কক্ষে।
সাভার থানা পুলিশের এই মানবিক উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে এলাকাবাসীর। দেশে প্রথমবারের মতো কোনো থানায় প্রতিবন্ধী মানুষদের সুবিধার্থে এই সেবা নিশ্চিত করা হলো। এই ইতিহাসের গর্বিত অংশীদার হিসেবে বেশ উচ্ছ্বসিত সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশের সন্মানিত আইজি; সব পর্যায় থেকে পুলিশকে আধুনিক এবং মানবিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে সেই সেই লক্ষ্য পূরণে আরও একধাপ এগিয়ে গেল সাভার মডেল থানা পুলিশ।’
নতুন এই সেবার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। আমেনা বেগম নামের পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক নারীকে হুইলচেয়ার প্রদানের মাধ্যমে এই সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এবং পুলিশের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রত্যেকটি থানায় নারী ও শিশু হেল্প ডেক্স স্থাপন করা হয়। এবার সাভার মডেল থানার মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্থ ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের কথা চিন্তা করে এই প্রথম চালু হলো হুইলচেয়ার সেবা। পক্ষাঘাতগ্রস্তদের আইনি সেবা প্রদানে এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নির্বিঘ্নে প্রবেশের জন্য থানা চত্বরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিঁড়ির পাশাপাশি তৈরি করা হলো চারটি র্যাম্প।’ খুব শিগগিরই ঢাকা জেলার প্রত্যেকটি থানায় এই সেবা কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেন তিনি।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহার সঞ্চালনায় ও ঢাকা জেলা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক ড. ভেলরি এ্যান টেইলর।
থানায় র্যাম্প ও হুইল চেয়ার সেবা কার্যক্রমে গভীর সন্তোষ জানিয়ে সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক ড. ভেলরি এ্যান টেইলর বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো থানায় পক্ষাঘাতগ্রস্থদের গমনাগমনের জন্য র্যাম্প ও হুইল চেয়ার সেবা চালুর মাধ্যমে মানবিক পুলিশ হিসেবে ঢাকা জেলা পুলিশ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভবন নির্মাণের আগে নকশায় প্রতিবন্ধী কিংবা বিশেষ সুবিধা সম্পন্ন ব্যক্তিদের কথা বিবেচনা করা হলে তা প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে আসবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন ও সুবর্ণ নাগরিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আসিফ ইকবাল চৌধুরী। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ নুর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাশিদ, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন, পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আব্দুল্লা বিশ্বাস প্রমুখ।