প্রলয় গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ, আটক ২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়নের ওপর হামলার ঘটনায় ‘প্রলয় গ্যাংয়ে’র ১৯ সদস্যের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার মা সাদিয়া আফরোজ খান।
গতকাল রোববার (২৬ মার্চ) রাতে ঢাবির ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দেন তিনি। এরপর রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্তদের মধ্যে দুইজনকে আটক করে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে। তদন্তের স্বার্থে আটক শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি জসীম উদ্দিন হলের সামনে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের (২০২০-২১ সেশন) শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়নের ওপর অতর্কিত হামলার মাধ্যমে রক্তাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অপরাধকাণ্ড ঘটানো প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যরা।
অভিযুক্তরা হলেন—শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগ ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের তবারক মিয়া, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের ফয়সাল আহম্মেদ সাকিব ও ফারহান লাবিব, দর্শন বিভাগের অর্ণব খান, মার্কেটিং বিভাগের মো. শোভন, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের নাঈমুর রহমান দুর্জয়, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সাদ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের সিফরাত সাহিল, সমাজকল্যাণ বিভাগের হেদায়েত নূর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাহিন মনোয়ার, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাদমান তাওহিদ বর্ষণ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ সাইদ, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের আবু রায়হান, লোক প্রশাসন বিভাগের প্রত্যয় সাহা, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আব্দুল্লাহ আল আরিফ, কবি জসিম উদ্দিন হলের রহমান জিয়া, চাইনিজ ল্যাংগুয়েজ বিভাগের ফেরদৌস আলম ইমন, ফ্যাইন্যান্স বিভাগের মোশারফ হোসেন এবং জগন্নাথ হলের জয় বিশ্বাস।
জানা গেছে, অভিযুক্তদের সবাই প্রলয় নামে একটি গ্যাংয়ের সদস্য। জোবায়েরকে মারধরের পর প্রলয় গ্যাংয়ের মাদক আখড়া, চাঁদাবাজি, র্যাগিং ও মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধকাণ্ডের তথ্য প্রকাশ করে কয়েকটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
অভিযোগ পত্রে ভুক্তভোগীর মা সাদিয়া আফরোজ খান জানান, তাঁর ছেলে জোবায়ের গত ২৫ তারিখে ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে বন্ধুরা মিলে ইফতার করছিল। হটাৎ একটি প্রাইভেট কার খুবই বাজেভাবে যাচ্ছিল এবং তাদের গায়ে কাঁদা ছিটায়। গাড়ির ভেতরে উচ্চস্বরে গান বাজছিল। তখন জোবায়ের এবং সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ডাক দেওয়ার পরেও গাড়িটি থামেনি। জোবায়ের ও চার বন্ধু নিঝুম, খালিদ মাহমুদ মিরাজ, মো. রোকন খান ও পৃথিং মারমার সঙ্গে ইফতার শেষ করে কার্জন হলের দিকে যাচ্ছিলেন। তিন নেতার মাজারের সামনে ওই গাড়িটা দেখে তারা চিনতে পারে এবং গাড়িটিকে জিজ্ঞাসা করে যে এভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল কেন। তারপর বিবাদীদের মধ্যে একজন বলল, ‘তোরা সবাই কথা না বাড়িয়ে এখান থেকে চলে যা।’ ক্যাম্পাসের ভেতরে কেউ এভাবে গাড়ি চালায় কিনা জানতে চাইলে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে যায়। একপর্যায়ে কথা কাটাকাটি হয়।
সাদিয়া আফরোজ খান বলেন, ‘আমার ছেলে কার্জন হল এলাকা থেকে জসীম উদ্দিন হলে এলে সন্ধ্যা ৭টার সময় একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে সাহিল নামের একজন কল দেয়। আমার ছেলে কোথায় আছে জিজ্ঞাসা করে। জোবায়ের জসীমউদ্দিন হলের সামনে আছে বলে জানালে সাড়ে ৭টার দিকে বিবাদীরা স্ট্যাম্প, লোহার রড, চামড়ার বেল্ট ও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাথারি মারধর করে।’
এই বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সবকিছু জেনে ও তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে দুইজনকে থানায় আনা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘জসীম উদ্দিন হল এলাকায় মারামারির ঘটনায় অভিযুক্ত দুজনকে আটক করে আমরা থানায় দিয়েছি। অনুসন্ধানের স্বার্থে এখনি নাম প্রকাশ করছিনা। তবে, এটুকু বলা যেতে পারে, তারা উভয়েই দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।’
প্রক্টর আরও বলেন, ‘মারামারির ঘটনায় অভিযুক্ত সবার তথ্যই আমাদের কাছে আছে। আমরা এগুলো যাচাই-বাছাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো। আর যাকে মারা হয়েছে, তার পরিবার এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছে। সেখানে যাদের নামগুলো এসেছে তারাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম অপরাধে যারাই জড়িত আছে তাদের বের করার প্রক্রিয়া চলমান।’