রমজানে হৃদরোগীদের করণীয়
রমজানের সময় হৃদরোগীদের বিভিন্ন নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হয়। আর রোজায় এই ধরনের রোগীদেরকে চিকিৎসকরা বিভিন্ন রকম পরমর্শ দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতেই হয়। আজ আমরা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে রমজানে হৃদরোগীদের ইফতার ও সেহরি সম্পর্কে জানব।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিনের একটি পর্বে রমজানে হৃদরোগীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ডা. শেখর কুমার মন্ডল। আর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন পুষ্টিবিদ ডা. নুসরাত জাহান দীপা।
যেহেতু এখন রমজান মাস চলছে। তাই রমজানে হৃদরোগীরা রোজা রাখতে পারবেন কিনা, সঞ্চালকের এ প্রশ্নের জবাবে ডা. শেখর কুমার মন্ডল বলেন, রমজান মাসে ১.৮ বিলিয়ন মুসলমান রোজা রাখে। তাদের মধ্যে অনেকের হৃদরোগ আছে এবং তারা রোজা রাখতে পারবেন কিনা অনেকে জানতে চায়। যাদের হার্টের অসুখ আছে ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের রোজা রাখতে কোনো সমস্যা হবে না। এক্ষেত্রে আবার অনেককেই সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে, সেটা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে হৃদরোগের সঙ্গে অনেকের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও কিডনি ডিজিজসহ জটিল রোগ থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাছাড়া যাদের স্বাভাবিক হৃদরোগ ও ওষুধ খেয়ে এটি নিয়ন্ত্রণে আছে। তাদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা কোনো সমস্যা হবে না।
হৃদরোগীরা রমজানের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ বা কিভাবে ওষুধ সেবন করবেন এ ব্যাপারে চিকিৎিসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে সঞ্চালকের এ প্রশ্নের জবাবে ডা. শেখর কুমার মন্ডল বলেন,রমজানের আগে একজন রোগীর রক্তচাপ ঠিক আছে কিনা,ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা,কিডনির কার্যক্রম ও লিভারের কার্যক্রম ঠিক আছে কিনা,এগুলো রমজানের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শে চেকআপ করে নিতে হবে। এরপর চিকিৎসক রোজা রাখার আগে তাদের কিছু নির্দেশনা দেবে।
কারণ সাধারণত দিনে যে ওষুধ খাওয়া হয়,সেটা রোজার মাসে খাওয়া সম্ভব নয়। তখন এই দিনকে রাত বানিয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ সকালে যে ওষুধ খাওয়া হয়,সেই ওষুধ খেতে হবে ইফতারের সময়। রাতের ওষুধ সেহরির সময় অর্ধেক ডোজ খেতে হবে। কারণ সারাদিন তাদের অনাহারে থাকতে হবে। অর্থাৎ হৃদরোগের সঙ্গে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদেরকে ইফতার ও সেহরিতে দুইবার ডোজ দিয়ে সমন্বয় করতে হবে। আবার যাদের হৃদরোগ আছে। তাদের তিন বেলার ওষুধ দেওয়া হয়। রমজানের সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, ওষুধের ডোজকে দুই বেলায় নিয়ে এসে ইফতার এবং সেহরিতে ভাগ করে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে হৃদরোগের সঙ্গে হার্ট ফেইলিওর থাকে। হার্ট ফেইলিওর হচ্ছে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া। তখন আমাদের সমস্ত শরীর ফুলে যায়। এবং যাদের শ্বসকষ্ট হয়, তাদেরকে ডাইরেটিক ওষুধ দিতে হয়। আর ডাইরেটিক এর কাজ হচ্ছে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়া। এটা স্বাভাবিক সময় সকালে দেওয়া হয়। কিন্তু রোজার সময় এই ওষুধ ইফতারের সময় দেওয়া হয়। এতে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কারণ অনেক সময় ওয়াসরুমে যেতে হতে পারে। আর সেহরির সময় ওষুধ দিলে,সারাদিন পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই এটাকে সমতা বজায় রাখার জন্য ইফতারের সময় দেওয়া হয়। এজন্য একজন চিকিৎসক একজন রোগীকে ভালো পরামর্শ দিতে পারে। অর্থাৎ একজন রোগী রোজা কীভাবে রাখবে ও ওষুধ কীভাবে খাবে,এ ব্যাপারে একজন চিকিৎসক রোগীকে ভালো পরামর্শ দিতে পারে।
শরীর চর্চা সম্পর্কে হৃদরোগীদের সবসময় চিকিৎসকরা বিশেষভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যেন শারীরিক কার্যক্রম সবসময় ঠিক থাকে। শরীর শরীর চর্চার ক্ষেত্রে রমজানের সময় আলদাভাবে সময় উল্লেখ করেন কিনা অর্থাৎ হাঁটার ব্যাপারে কীভাবে রোগীদের পরামর্শ দেন, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শেখর কুমার মন্ডল জানান,রমজানে রোজা রাখার ফলে সকালে কিংবা দিনের বেলা ব্যায়াম করা যাবে না। এই শরীর চর্চা ইফতারের পরে করতে হবে। ইফতারের আধ ঘণ্টা পর শরীর চর্চা করবেন এবং ৩০ মিনিট হাঁটবেন। সপ্তাহে ৫ দিন হাঁটলে ১৫০ মিনিট হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনাদের পূর্ণাঙ্গ কোর্স সম্পন্ন হলো। যারা রোজা রাখে তাদের জন্য তারাবির নামাজ রয়েছে,যা তাদের জন্য একটি শরীর চর্চা। রোজা রেখে খাওয়ার ফলে দেহের খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরল ৩০-৪০% বেড়ে যায়। অর্থাৎ শরীর চর্চা এবং রোজা এই দুটোই হৃদরোগের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো কমিয়ে দেয়। সুতরাং রোজা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
রমজানে হৃদরোগীদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আরও জানতে উপর্যুক্ত ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এনটিভি হেলথ ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং জানুন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ।