দেশে ব্যাপক উন্নয়নের পেছনে রয়েছে স্থিতিশীল সংসদীয় গণতন্ত্রের অবদান : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৮ সাল থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা এবং একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করছে। আজ শুক্রবার (৭ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদে প্রস্তাব উত্থাপনের সময় এই কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত তিন মেয়াদে (২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত) বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ধারাবাহিক অগ্রগতি, সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সুযোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ অনেক সাফল্য অর্জন করেছে, যেমন—সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) সফল বাস্তবায়ন, দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনা, বাংলাদেশের ক্রমান্বয়ে টেকসই উন্নয়ন, বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশেগুলোর ক্লাবে উত্তরণ লাভের মতো অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। সাফল্যগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে—শতভাগ ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, যোগাযোগ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন মানুষ ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসন, নারীর ক্ষমতায়ন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীরনিবাস (বাড়ি) নির্মাণ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে, জনগণের জীবন মানের উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের এক বিস্ময়।’
গোপালগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি দিবসে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রস্তাবে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছরের শুভ মুহূর্তে, সংসদ এ অভিমত পোষণ করে যে, সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে জনগণের আশা-আকাঙ্খার সফল বাস্তবায়ন ঘটবে এবং এভাবে গণতন্ত্র সুদৃঢ় হবে, একটি শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, সকলের জন্য সমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। এই প্রতিশ্রুতি পূরণে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ এবং সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্য বাস্তবায়নই আমাদের প্রত্যয় হওয়া উচিত।’
এর আগে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংসদে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সংসদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির জন্য এই সুযোগ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে তিনি (বঙ্গবন্ধু) সারা জীবন দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন এবং আত্মত্যাগ করেছেন।’ দেশ গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর মেয়াদের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা মাত্র তিন বছর সাত মাস তিন দিন সময় পেয়েছিলেন এবং সেই সময়ে তিনি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করছি এবং সে কারণেই ২০০৮ সাল থেকে দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রয়েছে, ফলে এখানে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।’