মেরু সাগরে রাশিয়ার সামরিক মহড়া
ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই তুষার ঢাকা মেরু সাগরে নতুন করে সামরিক মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া। আর্কটিক সী বা মেরু সাগরে এক হাজার ৮০০ সেনা, ১৫টি জাহাজ ও ৪০টি বিমান নিয়ে এই সামরিক মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া। ওই অ়ঞ্চলে এই প্রথম এত বড় সামরিক মহড়া করছে রাশিয়া। তাদের বক্তব্য, উত্তর-পূর্ব প্যাসেজে (উত্তর সাগর রুট) নিজেদের জাহাজ নিরাপদ রাখার জন্যই এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে।
রাশিয়ার উত্তরে মেরু সাগর অঞ্চল সাধারণত বরফেই ঢাকা থাকে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক বছর তা যাতায়াতের উপযোগী হয়ে উঠেছে। সারা বছরই সেখান থেকে জাহাজ যেতে পারছে। ফলে রাশিয়ার জন্য এই অঞ্চল আগের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলে উত্তর সাগর উত্তর-পূর্ব প্যাসেজে গিয়ে মেশে। যেখান দিয়ে আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরে পৌঁছানো যায়। অর্থাৎ, পৃথিবীর বিরাট একটা অংশের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে উত্তর-পূর্ব প্যাসেজ।
রাশিয়ার বক্তব্য, ওই প্যাসেজে তাদের বাণিজ্যিক জাহাজ যাতে নিরাপদভাবে যাতায়াত করতে পারে, তা দেখার জন্যই এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। স্থল, আকাশ এবং জলবাহিনী একসঙ্গে এই মহড়ায় যোগ দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে আচমকা এই মহড়া কূটনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই এই অঞ্চলে ন্যাটো সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছিল। ফলে নতুন করে রাশিয়ার সেখানে মহড়ার ব্যবস্থা করা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ন্যাটো এই মহড়ার দিকে লক্ষ্য রাখছে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে রাশিয়ার এই মহড়ার মধ্যেই কানাডা জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র দেবে। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি। টরেন্টোয় ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর। তারপরেই এই ঘোষণা দেওয়া হয়। কানাডা ইউক্রেনকে কয়েক হাজার অ্যাসল্ট রাইফেল, মেশিন গান এবং ২৪ লাখ রাউন্ড গুলি দেবে। এছাড়া রাশিয়ার ১৪ নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই বেসরকারি সেনাবাহিনী ওয়্যাগনার গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। বেলারুশের ৯ নাগরিকের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কানাডা।
রোমানিয়া এফ-৩৫ বিমান কিনছে
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সামরিক খাতে চোখে পড়ার মতো বাজেট বাড়িয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম দেশ রোমানিয়া। ইউক্রেনের সঙ্গে তাদের ৬৫০ কিলোমিটার সীমান্ত। রোমানিয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনছে তারা। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কথাও হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে তৎপর হয়েছে রোমানিয়া। সামরিক বাজেট বেশ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের অগ্রগতি ভালো নয়
গত কয়েক মাসে ইউক্রেন দাবি করেছে, পূর্ব ইউক্রেনে বহু জায়গা তারা পুনর্দখল করেছে। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট ফাঁস হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট এ বিষয়ে একটি খবরও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, গোয়েন্দারা বলছেন—গত কয়েক মাস ইউক্রেন যা দখল করতে চেয়েছিল, তার প্রায় কিছুই তারা অর্জন করতে পারেনি। ইউক্রেনের লক্ষ্য ছিল দনেৎস্ক ও ক্রিমিয়ার মধ্যবর্তী সেতু ধ্বংস করা, যাতে ওই অঞ্চলে রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে আলাদা করা যায়। সেই চেষ্টা একাধিকবার করা হলেও শেষ পর্যন্ত সেতুটি পুরোপুরি ধ্বংস করা যায়নি।