রাজধানীতে নতুন টাকার হাটে ভিড়
ঈদের সকালে বড়দের কাছ থেকে সালামি পাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে ছোটরা। নতুন চকচকে টাকায় ঈদি বা ঈদ সালামি তাদের আনন্দকে বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ। শুধু শিশুদেরই নয়, বড়দেরও নতুন নোটে সালামি দেওয়ার রীতি বহুদিনের। এ কারণে ঈদের আগে অনেকেই সংগ্রহ করে থাকেন নতুন টাকা। কেউবা সংগ্রহ করেন ব্যাংক থেকে, কেউবা সংগ্রহ করেন পথের পাশে বসে থাকা নতুন টাকা বিক্রেতার কাছ থেকে।
আজ বুধবার (১৯ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা দেখা যায়, জমে উঠেছে নতুন টাকা কেনাবেচার বাজার। নানা বয়সী ক্রেতারা ঈদের আমেজকে গায়ে জড়িয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নতুন টাকা। তবে বিক্রেতারা জানান, ঈদ কাছাকাছি চলে আসলেও তাদের আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। রাজধানীর গুলিস্তানে মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের উল্টো পাশে, আন্ডার পাসের পাস ঘেঁষে রাস্তার ওপর বিক্রি হচ্ছে নতুন নোট।
ডেমরার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য নতুন নোট কিনতে এসেছি। অন্য সময় বাচ্চাদের ৫০০ টাকা দিলেও যা, ঈদের সময় নতুন ২০ টাকার নোট দিলেই সেই আনন্দ। সেজন্যই কষ্ট করে এটা নেওয়া। প্রতি বছরই আমি নতুন নোট নিই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। এবারও নিয়েছি। কিন্তু কিছু বাড়তি টাকা লাগতো। তাই গুলিস্তান থেকে কিনে নিলাম। কারণ একবারের বেশি ফিঙ্গার দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া যায় না।’
ঈদে বকশিস দেওয়া ও নেওয়া দুটিই বেশ আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য। বাবার সঙ্গে ঈদ উপলক্ষে নতুন নোট কিনতে আসা ১২ বছরের শিশু মো. শাকিল হোসেনও জানালো এমনটাই। তার ভাষায়, ‘প্রতি বছরই বাবার সঙ্গে নতুন নোট কিনতে আসি, খুবই ভালো লাগে।’ নতুন টাকা দিয়ে কী হবে জানতে চাইলে শাকিল বলে, ‘ঈদের দিন সালামি হিসেবে এই নতুন নতুন টাকাগুলো সবাইকে দেওয়া হবে। বড় ভাইয়া, আপু সবাইকে। আমিও পাবো। আবার আমি আমার ছোট চাচাতো-মামাতো ভাইবোনকে ঈদের বকশিস দেবো।’
যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘১৪ হাজার ৫০০ টাকার নতুন নোট কিনেছি আমি। এর মধ্যে একশো, বিশ, দশ ও পাঁচ টাকার নোটের বান্ডিল কেনা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সবাইকে সালামি দেওয়া হবে। তাই এই নতুন নোট কেনা হলো। প্রতি বছরই আমাদের কেনা হয়। এই গুলিস্তান থেকেই কিনি।’ ব্যাংক থেকে কেন সংগ্রহ করেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে তো আসলে আমাকে এভাবে ভেঙে ভেঙে নোট নিতে দেবে না। এখান থেকে খুচরা কিনতে পারি। তাই এখান থেকেই কিনি।’
এই নতুন টাকা কোথা থেকে আনেন জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, তারা এসব নোট ব্যাংক থেকেই কিনে আনেন। তবে সরাসরি ব্যাংক থেকে তারা পান না। কয়েকজনের হাত ঘুরে তাদের হাতে আসে।
বিক্রেতারা জানান, এখন নতুন নোটের দাম কিছুটা বেশি। কারণ ব্যাংক থেকে নতুন নোট এখন বেশি দিচ্ছে না। আবার প্রতিদিনই ওঠানামা করছে নতুন এসব টাকার দাম। একেকজনের কেনার ওপর বিক্রির মূল্যেও রয়েছে ভিন্নতা। যদিও বিক্রেতারা জানান, সবার কাছে একই মূল্যে নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে। তবে সরেজমিনে নতুন টাকার এসব দোকান ঘুরে দেখা যায় তাদের মধ্যে রয়েছে মূল্যের ভিন্নতা।
দুই বছর ধরে বড় ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসা করছেন আমিনুল। বড় ভাই অনেক আগে থেকেই এই ব্যবসায় জড়িত। ঈদের বাজারে নতুন টাকার দাম জানিয়ে আমিনুল বলেন, দশ টাকার এক বান্ডিল (১০০টি নোট) আমরা বিক্রি করছি এক হাজার দুইশো টাকায়। পঞ্চাশ টাকার বান্ডিল (১০০টি নোট) বিক্রি করছি পাঁচ হাজার দুইশো পঞ্চাশ টাকায়। আর একশো টাকার বান্ডিলে তিনশো টাকা বেশি নিচ্ছি।’