ঢাকা ও যশোর থেকে সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর চক্রের তিন সদস্য গ্রেপ্তার
রাজধানীর মিরপুর ও যশোরের কোতয়ালী থানা এলাকায় আলাদা অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর চক্রের মূলহোতাসহ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ওই চক্রের সদস্যরা বিআরটিএতে দালালদের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন পরিবর্তনের কার্যক্রম চালাতেন। গতকাল শুক্রবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ শনিবার (৬ মে) রাজধানীর টিকাটুলি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে বিআরটিএর সুজন নামক এক দালালের নাম উঠে এসেছে।’
আরিফ মহিউদ্দিন জানান, গতকাল শুক্রবার যশোরের কোতয়ালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল চোর চক্রের মূল হোতা সৈয়দ মাহামুদ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই চক্রের মিরাজ হোসেন (৩২) ও মো. আল আমিন (৪৩) নামের আরও দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় একটি চোরাই মোটরসাইকেল এবং একটি চোরাই মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চোরাই ও ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল ও গাড়িগুলো একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে গাড়ির রং, ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর পরিবর্তন এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করত। পরে ওইসব গাড়ি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্রয়-বিক্রয় করত।
আরিফ মহিউদ্দিন আরও জানান, গ্রেপ্তার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই চক্রটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। প্রথমত মাহমুদের নেতৃত্বে একদল মাঠপর্যায়ে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চুরির উদ্দেশ্যে প্রথমে টার্গেট ঠিক করে। ওই টার্গেটকে সামনে রেখে রেকির মাধ্যমে মোটরসাইকেল রাখার স্থান বা বাসা চিহ্নিত করে। পরে সময়-সুযোগ বুঝে তারা মোটরসাইকেলের তালা ভাঙা ও কাটার মতো কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে রাতের আঁধারে টার্গেট করা বাসায় ঢুকে মোটরসাইকেলটি চুরি করে পালিয়ে যায়। পরে কৌশলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে চুরি করা মোটরসাইকেল নিয়ে তারা রাজধানী ছেড়ে দেশের কোনো দূরবর্তী জেলায় চলে যায়। সেখানে ওই চোরচক্রের অন্যান্য সদস্যদের কাছে মোটরসাইকেল হস্তান্তর করার পর তারা অতি দ্রুততার সাথে তাদের নিজস্ব ওয়ার্কশপে নিয়ে মোটরসাইকেলের রং, ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর, নম্বর প্লেট ইত্যাদি পরিবর্তন করে ফেলে। পাশাপাশি তারা ওই মোটরসাইকেলের কিছু পার্টস পরিবর্তন বা সংযোজন করে দেয় যাতে করে প্রকৃত মালিক গাড়িটিকে সহজে চিনতে না পারে।
আরিফ মহিউদ্দিন জানান, মোটরসাইকেলের যন্ত্রপাতি পরিবর্তনের কার্যক্রম চলতে থাকার পাশাপাশি ওই চক্রের আরেকটি দল বিআরটিএতে দালালদের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন পরিবর্তনের কার্যক্রম চালায়। এক্ষেত্রে গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বিআরটিএর সুজন নামক একজন দালালের নাম উঠে আসে। তিনি ওই চোরচক্রটির একজন অন্যতম হোতা। তার মাধ্যমেই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর পরিবর্তন, ভুয়া ট্যাক্স টোকেন, রোড পারমিট, ফিটনেস সনদ, ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি করা হয়ে থাকে। এরপর মোটরসাইকেলটি ওই চক্রের আরেকটি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই চক্রের অন্যতম দুই সহযোগী আল আমিন এবং মিরাজের নেতৃত্বে সেই দলটি চোরাই মোটরসাইকেলের প্রকৃত মালিক সেজে বিভিন্ন প্রতারণামূলক পন্থা অবলম্বন করে সাধারণ মানুষের কাছে তা বিক্রয় করে থাকে। এভাবেই এই বৃহৎ সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোরচক্রটি পরস্পরের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল ও গাড়ি চুরি করে সেগুলো সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রয় করে আসছে।
যেভাবে গড়ে উঠে চক্র
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া মূলহোতা মাহামুদের বরাত দিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন জানান, তিনি অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফার আশায় বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের পথ বেছে নেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের শুরুর দিক থেকে তিনি মোটরসাইকেল চোরচক্রের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন এবং এ ধরনের আরও কয়েকটি সংঘবদ্ধ চোরচক্রের সাথে যুক্ত হয়ে একটি বৃহৎ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এভাবেই এই বৃহৎ সিন্ডিকেটটি রাজধানীসহ সারাদেশে তাদের চুরির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
গ্রেফতারকৃত আল-আমিন তার দৃশ্যমাণ পেশা রং-মিস্ত্রির কাজের আড়ালে তাদের চোরাইকৃত মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য গ্রাহক সংগ্রহ করে থাকে। এ ছাড়া মিরাজ তার দৃশ্যমান পেশা গাড়ি চালনার আড়ালে এসব চোরাইকৃত মোটরসাইকেল বিক্রির উদ্দেশ্যে একস্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরের কাজ করে থাকে।