রেকর্ড সাড়ে ৫ কোটি টাকা মিলল পাগলা মসজিদের দানবাক্সে
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের আট দানবাক্সে এবার রেকর্ড অর্থ মিলেছে। এবার দানবাক্সে মিলেছে পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯ টাকা। এ ছাড়া বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা এবং স্বর্ণ ও রূপার বিভিন্ন ধরনের অলংকারও পাওয়া গেছে।
আজ শনিবার (৬ মে) রাতে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রশাসনের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ১৯ বস্তা অর্থ পাওয়া গেছে। হিসেব করে দেখা গেছে মোট টাকার পরিমাণ পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯।’
এর আগে তিন মাস ছয় দিন পর সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি মসজিদটির দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৮টি দানবাক্সে চার কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল, যা ছিল তার আগের সময়ের থেকে সর্বোচ্চ। তবে, সেই রেকর্ড আজ ভেঙে গেছে।
আজ সকাল ৯টার দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এটিএম ফরহাদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ। দানবাক্স খুলে প্রথমে ১৯টি বড় বস্তায় টাকা ভরা হয়। এরপর শুরু হয় টাকা গণনা। এ কাজে মাদ্রাসার ১১২ ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য ছিলেন।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পাগলা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মিয়া জানান, মসজিদের প্রাপ্ত দানের টাকা থেকে পাগলা মসজিদ এবং এই মসজিদ কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও গোরস্তানের ব্যয় নির্বাহ করাসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় সহায়তার পাশাপাশি গরীব ছাত্র ও দুঃস্থদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক কাজেও টাকা প্রদান করা হয়।
পারভেজ মিয়া আরও জানান, সব টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হবে। বর্তমানে পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সকে ঘিরে এখানে একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে মসজিদ কমপ্লেক্স আরও দৃষ্টিনন্দন হবে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট তিনতলা বিশাল পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় অবস্থিত পাগলা মসজিদটি প্রায় চার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।
কথিত আছে, প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে বাংলার বারো ভুঁইয়া বা প্রতাপশালী বারোজন জমিদারদের অন্যতম ঈশা খাঁর আমলে দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা নামক একজন ব্যক্তি নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে ওই স্থানটিতে মসজিদটি নির্মিত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’হিসেবে পরিচিতি পায়।