ব্রিটেনে রাজতন্ত্রবিরোধীদের গ্রেপ্তার করে সমালোচনার মুখে পুলিশ
লন্ডনে রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেকের রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভ থেকে ৫২ জনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় মহানগর পুলিশের সমালোচনা করেছে কয়েকজন সংসদ সদস্য ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো। খবর বিবিসির।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে রিপাবলিক গ্রুপের প্রধান গ্রাহাম স্মিথও ছিলেন, যারা দেশটিতে রাজতন্ত্র বাতিল এবং রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করতে চান। ১৬ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে থাকার পর শনিবার সন্ধ্যায় মুক্তি পাওয়ার পর গ্রাহাম স্মিথ বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে আর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার বজায় নেই।’
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের কর্মকর্তা কারেন ফিন্ডলে বলেন, ‘প্রতিবাদ যখন অপরাধ ও গুরুতর ব্যাঘাত ঘটানোর আশঙ্কা তৈরি করে তখন তাদের হস্তক্ষেপ করা কর্তব্য ছিল। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ছিল, যা আমাদের মূল্যায়নে প্রধান বিবেচ্য ছিল।’
গতকাল শনিবার (৬ মে) মধ্য লন্ডনে বৃষ্টির মধ্যে শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিলেন, যারা রাজতন্ত্রবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এছাড়া কার্ডিফ, গ্লাসগো ও এডিনবার্গেও বিক্ষোভ করেছে মানুষ। তবে লন্ডনের বাইরে কাউকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জানায়, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে হাঙ্গামা, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ, শান্তি বিনষ্ট এবং রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের চারপাশে জনসাধারণের মাধ্যমে উপদ্রব সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আটক করা হয়েছে।
যদিও বিক্ষোভকারীরা জোর দিয়ে বলেন, তাদের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে পুলিশের দাবি, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে—‘বিক্ষোভকারী দলগুলো রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান ব্যাহত করার জন্য সংকল্পবদ্ধ ছিল’।
বেশ কয়েকজন লেবার দলীয় সংসদ সদস্য পুলিশের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক স্যার ক্রিস ব্রায়ান্ট টুইটারে লেখেন, বাক স্বাধীনতা এক ধরনের রূপার তারের মতো যা একটি সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের মধ্য দিয়ে চলে।
ছায়া মন্ত্রী জেস ফিলিপসও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, আমাদের জাতি ও রাজা এতটা ভঙ্গুর নয় যে ভিন্নমতের অহিংস প্রতিবাদ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে না।
লেবার এমপি রিচার্ড বার্গন বলেন, তিনি বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের কারণে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সংসদ সদস্য জারাহ সুলতানা বলেন, ‘আপনি রাজতন্ত্র নিয়ে যা-ই ভাবুন না কেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার।’
বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সমালোচনা করে যুক্তরাজ্যের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক ইয়াসমিন আহমেদ বলেন, ‘এমন কিছু আপনি মস্কোতে আশা করতে পারেন, লন্ডনে নয়।’
গ্রাহাম স্মিথ নিশ্চিত করেন, তিনি শনিবার সন্ধ্যায় মুক্তি পেলেও রিপাবলিকের অন্য সদস্যরা এখনও পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘আমি শুনেছি রাজা আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আছেন। অথচ এখন তার নামে আমাদের স্বাধীনতার ওপর হামলা করা হচ্ছে।’
রাজতন্ত্রবিরোধী শত শত প্ল্যাকার্ডও পুলিশ জব্দ করেছে বলেও অভিযোগ করেছে রিপাবলিক গ্রুপ।