‘আশা’ কর্মকর্তা বেলাল হত্যায় আসামি রাজার মৃত্যুদণ্ড
রাজধানীতে নৃশংস এক হত্যাকাণ্ড চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। এনজিও সংস্থা ‘আশা’ কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসাইনকে হত্যা করে পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করে নদীতে মরদেহ ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনার রায় এলো আজ। আসামিকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। একইসঙ্গে আসামি রেজা ওরফে রাজাকে (৩৮) আলামত নষ্টের দায়েও শোনানো হয়েছে সাজা।
আজ সোমবার (৮ মে) বিকাল পৌঁনে ৫টায় পিনপতন নিরব পরিবেশে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ৭ম অতিরিক্ত বিচারক তেহসিন ইফতেখার এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি রাজা কাঠগড়ায় প্রতিক্রিয়াহীন ও স্বাভাবিক ছিলেন। তার পক্ষে কোনো আইনজীবীও সেসময় উপস্থিত ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি হুমায়ুন কবির চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পরপর কঠোর পুলিশি পাহারায় আসামি রাজাকে কাঠগড়া থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আসামির মুখ ঢাকা ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হুমায়ুন কবির চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটি একটি স্পর্শকাতর মামলা। এনজিও সংস্থা আশার কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসাইন লোন কালেকশন করতে আসামি রেজা ওরফে রাজার বাসায় গেলে তাকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেন। পরে খিলগাঁও বালুর মাঠে নিয়ে গলা পেছিয়ে হত্যা করা হয়। পরে এক মাঝির সহযোগিতায় পেট কেটে নাড়িভুড়ি বের করে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আদালত আসামি রেজাকে মৃত্যদণ্ড দিয়েছেন। রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি।’
যেভাবে খুন হন বেলাল হোসাইন
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১২ মে এনজিও সংস্থা আশা অফিস থেকে ঋণের কিস্তি আদায়ে বের হন জুনিয়র কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসাইন, কিন্তু লোন কালেকশন করে দুপুরের পরও অফিসে ফেরৎ না আশায় অফিস থেকে তাকে ফোন দেওয়া হয়। ফোনে তাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে, আশার কর্মকর্তারা জানতে পারেন, নিহত মো. বেলাল হোসাইন খিলগাঁও এলাকা থেকে ওদিন মোট এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা ঋণের কিস্তি আদায় করেন। সর্বশেষ খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা রেজা ওরফে রাজার বাসায় ঋণের কিস্তি তুলতে যান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আশার কর্মকর্তারা রেজা ওরফে রাজার বাসায় গিয়ে তার স্ত্রী সোনিয়াকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, তাদের বাসায় বেলাল হোসাইন গিয়েছিলেন, কিন্তু টাকা না নিয়ে সে চলে যান। একপর্যায়ে, আসামি রেজাকে ফোন দিলে সেও অস্বীকার করে। পরে থানায় জিডি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নিখোঁজের দুদিন পর ২০১৮ সালের ১৪ মে সকাল ৯টার সময় খোঁজ পাওয়া যায়, খিলগাঁও বালু নদীতে এক যুবকের মরদেহ ভেসে উঠেছে। আশা কর্মকর্তারা সেটিকে বেলালের বলে শনাক্ত করেন। পরে আসামি রেজাকে গ্রেপ্তারের পর তিনি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
মামলার চার্জশিটেও ২০১৮ সালে ১২ মে সকালে ঋণের কিস্তি আদায়ে বের হওয়াসহ সর্বশেষ খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা রেজা ওরফে রাজার বাসায় যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। চার্জশিটে আরও বলা হয়, আসামি রেজা ওরফে রাজা স্ত্রী সোনিয়াকে চার হাজার টাকা কিস্তি আশার অফিসে দিতে বলে। পরে এনজিও সংস্থা আশার সংগ্রহের এক লাখ ৩০ হাজার টাকা লুটের জন্য বেলাল হোসাইনকে জুররি কাজে বাড্ডা যেতে হবে বলে খিলগাঁও থেকে সিএনজিতে করে বালুর নদীর ঘাটে যায়। সেখানে নৌকা যোগে নদী পার হয়ে বালু নদীর মাঠে কৌশলে গামছা পেছিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে বেলালের সঙ্গে থাকা সব টাকা নিয়ে নেয় আসামি রাজা।
মামলার চার্জশিটে উঠে আসে নৃশংস হত্যার বর্ণনা
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, মরদেহ গুম করতে নিহত বেলালের দুই হাত জিআই তার দিয়ে বাঁধেন আসামি রাজা। পরে পেট কেটে নাড়িভুড়ি বের করেন। এরপর মরদেহটি পানিতে ডুবিয়ে দিতে পেটের ভেতর পাথর ঢুকিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু দুদিন পর ২০১৮ সালের ১৪ মে সকাল ৯টার সময় ওই মরদেহ নদীতে ভেসে ওঠে।
পাঁচ বছর পর রাজার মৃত্যুদণ্ডের রায়
মামলার চার্জশিট অনুযায়ী জানা যায়, নদীতে মরদেহ ভেসে উঠলে তা বেলালের বলে শনাক্ত করেন আশার কর্মকর্তারা। পরে আশার কর্মকর্তা আফরোজা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেন। গ্রেপ্তার হন রাজা। পরে এই হত্যাকাণ্ড স্বীকার করেন তিনি। এদিকে, বেলালের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া এক লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ৫৪ হাজার টাকা তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।
২০১৮ সালের ওই মামলার আজ রায় দিলেন আদালত। রায়ে বলা হয়, আসামি রাজার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো। এ ছাড়া মরদেহ গুমের চেষ্টা করায় তাকে সাত বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হলো।