টাকা দিলে নিবেন, ভোটটা পছন্দের প্রার্থীকে দিবেন : গাজীপুরে সিইসি
‘কালো টাকা দিলে নিবেন কিন্তু ভোটটা পছন্দ মতো লোককে দিবেন। যেহেতু ভোট দেওয়ার সময় ওই ব্যক্তি আপনাকে দেখবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
আজ বুধবার (১০ মে) দুপুরে জেলা শহরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটরিয়ামে মতবিনিময় সভায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলাসহ নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করার জন্য নানা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন সিইসি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নানা অভিযোগ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা সরেজমিন দেখার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য আজ সকালে গাজীপুরে আসেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সিইসি প্রথমেই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের অভিযোগগুলো শুনেন। এ সময় কয়েকজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ভোটারদের হুমকি দিয়ে ন্যাশনাল আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে কালো টাকার ছড়াছড়িসহ প্রার্থীদের নিরাপত্তাবিষয়ক নানা প্রশ্ন তুলে ধরেন।
পরে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আজমত উল্লাহ খান, আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে একাধিকবার পোস্টার ছাপানোর অনুমতি চেয়ে অনুরোধ করেন।
জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন বিগত সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে নানা রকম কথা রয়েছে সেই দিক বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হস্তে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহানুর ইসলাম রনি বিগত ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় কেন্দ্র থেকে সরকারদলীয় লোকজন বিরোধী প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয় এমন অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে এ বিষয়ে কোনো ফলপ্রসূ কার্যক্রম দেখা যায়নি।এ বছরও যেন তেমন না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেন।
সব অভিযোগ শুনে সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি সংস্কৃতিতে অনেক কালো ও অপসংস্কৃতি রয়ে গেছে। একদিন হয়তো আমাদের ও আপনাদের সবার চেষ্টায় অহিংস ও সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সবাই ভোট দিতে পারবে।’
নির্বাচনে কালো টাকা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘কালো টাকা দিলে নিবেন কিন্তু ভোটটা পছন্দ মতো লোককে দিবেন। যেহেতু ভোট দেওয়ার সময় ওই ব্যক্তি আপনাকে দেখবে না।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও মতবিনিময় করেন সিইসি। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সিইসি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের নিরপেক্ষভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
এ সময় বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।
সভায় এবারের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অংশ নেওয়া মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে তিন হাজার ৪৯৭টি ভোট কক্ষ থাকবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ এবং মহিলা ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন।
এ নির্বাচনে ৪৮০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, তিন হাজার ৪৯৭ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ছয় হাজার ৯৯৪ পোলিং অফিসারসহ ১০ হাজার ৯৭১ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা থাকবেন।