মামলার শুনানি শেষে হিট স্ট্রোকে আইনজীবীর মৃত্যু
ঢাকা আইনজীবী সমিতির ২১ ব্যাচের সদস্য হিট স্ট্রোকে অ্যাডভোকেট শফিউল আলম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে ঢাকা আদালত চত্বরে অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান মামুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আদালতে মামলার শুনানি শেষে চেম্বারে আসার সময় শফিউল আলম মাথা ঘুরে পড়ে যান। সহকর্মী আইনজীবীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায় হিটস্ট্রোকে তিনি মারা গেছেন।’
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে স্বাভাবিক ড্রেস পরিধান করা কষ্টকর। তন্মধ্যে কোর্ট, গাউন নিয়ে এ গরমে টিকে থাকা আরও কষ্টকর। আমরা মাননীয় প্রধান বিচারপতি বরাবর গরমের দিনে ড্রেস কোর্ট পরিবর্তন করে শুধু সাদা শার্ট ব্যান্ড পরে শুনানির একটি আবেদন করেছি। কিন্তু, এখনো কোন সিদ্বান্ত হয়নি। গরমে ড্রেসকোর্ট পরিবর্তন করা খুবই জরুরি।’
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জোবায়ের বলেন, ‘আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই আইনজীবী চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে শুনানি শেষে চেম্বারে ফিরছিলেন। হঠাৎ মেট্রোপলিটন বার অ্যাসোসিয়েশনের সামনে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। তখন উপস্থিত আইনজীবীরা তাকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির মেডিকেলে নিয়ে যান। তখন পর্যন্ত তার হুশ ছিল। এরপর অবস্থার অবনতি হলে পার্শ্ববর্তী ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে ওই আইনজীবীর সহকর্মী অ্যাডভোকেট মো. ওসমান গণী সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, ‘মামলার শুনানি শেষ করে মেট্রো বারের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ এক আইনজীবী মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলেন দেখে আমার সঙ্গে আরেক আইনজীবীসহ মুখে পানি দিয়ে মুখে হালকা চিনি দিয়ে অনেক কষ্টে রিকশায় উঠালাম। পরে ঢাকা আইনজীবী সমিতির হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার দেখে বললেন, হিট স্ট্রোক করেছেন। এ সময়ও আইনজীবী শফিউল আলম হালকা কথা বললেন। মনে হলো স্বাভাবিক হচ্ছেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তার মামলার ফাইল, গাউন কোট কোথায়? আমি বললাম, সব আছে আপনি চিন্তা করবেন না।’
অ্যাডভোকেট মো. ওসমান গণী আরও জানান, ‘তিনি (শফিউল আলম) বলেন, ‘আমি জামিন করিয়েছি, বেইল বন্ড জমা দেওয়া হয়নি। আমি বললাম, সমস্যা নেই, দিতে পারবেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ বললাম। ভাবলাম সুস্থ হয়েছেন। ডাক্তার বললেন, স্যালাইন খাওয়ান, গরমে এমন হয়েছে, আর আপনারা যে পোশাক পরেন! আমি স্যালাইন আনতে দিলাম এক ভাইকে। তখন তিনি বললেন, ওয়াশরুমে যাবেন। ডাক্তার বলেন, ওয়াশরুমে নিয়ে যান। আমি অনেক কষ্টে আমার সঙ্গে এক আইনজীবীকে নিয়ে ওয়াশরুমে বসালাম। কিন্তু, তিনি প্যান্ট খুলতে পারছিলেন না। আমি নিজ হাতে জামাকাপড় সব খুললাম, লজ্জা-শরম সব বাদ দিয়ে তাকে বাথরুমে বসালাম। পেছনে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছি, তারপর দেখি, কথা বলছেন না। হাত পা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তারপর ভেতরে আরেক আইনজীবীকে ডেকে আনলাম। তিনি ধরে ছিলেন, আমি নিজ হাতে তাকে পরিষ্কার করলাম। কিন্তু, তারপর তার আর কোনো কথা নেই। আমি দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম, ডেকে আনলাম। ডাক্তার দেখে বললেন, ওনার অবস্থা খারাপ, আপনারা তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাসপাতালে নেন। আমি গামছা এনে কোনো রকম লজ্জাস্থান ঢেকে রিকশায় ন্যাশনাল হাসপাতালে নিলাম। কর্মরত ডাক্তার দেখে বললেন, তিনি আর নেই। আমার শরীরটা কিছুক্ষণের জন্য হিম হয়ে গেল, এতো কষ্ট করেও বাঁচাতে পারলাম না। এর থেকে কষ্টের আমার জীবনে আর কিছু নেই।’