গাজীপুর সিটি নির্বাচন : প্রচারণায় পাল্টে গেছে দৃশ্যপট
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। তাই নির্বাচন ঘিরে হঠাৎ করেই পাল্টে গেছে মহানগরীর দৃশ্য ও পরিবেশ। ক্রমেই জমে উঠছে নির্বাচন। নির্বাচনি আমেজে ইতোমধ্যেই সরগরম হয়ে উঠেছে সিটি করপোরেশন এলাকা।
আজ শুক্রবার (১২ মে) জুমাবার হওয়ায় প্রায় সব প্রার্থী বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। এ সময় তাঁরা মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় গণসংযোগও করেছেন। ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট ও দোয়াও চেয়েছেন তাঁরা।
সিটি নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় এলাকায় মাইকিং, হ্যান্ডবিল দিয়ে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় রয়েছেন সমর্থক-কর্মীরাও। নগরীর অলিগলি, বাজার, রাস্তার পাশে টাঙানো হয়েছেন নির্বাচনি পোস্টার। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে নির্বাচনি ক্যাম্প। অনেকের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণ বিধি ভঙ্গেরও অভিযোগ উঠেছে।
প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে প্রতিদিনই প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ করছেন। ভোটারদের খুঁজে যাচ্ছেন বাড়ি, অফিস ও মিল কারখানাসহ বিভিন্ন হাট-বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। ভোটারদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। নানা কৌশলে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান (নৌকা) সহ হেভিওয়েট প্রার্থীরা হিসাব-নিকাষ করে প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তারা বিভিন্ন সভা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন ভোটারদের খুশি করার জন্য।
এবার গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদের ৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গেই সব প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
গাজীপুর সিটির এবারের ১৯টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের জন্য ৭৮ জন এবং ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ২৪৩ জনসহ মোট মোট ৩২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মেয়র পদের জন্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমতউল্লা খান (নৌকা), জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা), জাকের পার্টির মো. অলিউর রহমান (গোলাপ ফুল) ও গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (মাছ), সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি), সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি (হাতি) ওহারুন অর রশীদ (ঘোড়া) প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান (নৌকা) কর্মী সমর্থকদের নিয়ে আজ দিনভর টঙ্গী, সদর, বাসন ও গাছা থানা এলাকায় গণসংযোগ করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। দুপুরে তিনি টঙ্গী এলাকার একটি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এ সময় তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন এবং তাঁদের খোঁজখবর নেন। গণসংযোগকালে তিনি গাজীপুর সিটির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বৃহৎ পরিকল্পনা মোতাবেক নাগরিক সুবিধা সংবলিত গাজীপুর মহানগরীকে একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ সিটি করপোরেশন হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন।
গণসংযোগের ফাঁকে ফাঁকে আজমত উল্লা খান সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মতবিনিময় সভায়ও যোগ দেন এবং একাধিক পথসভায় বক্তব্য দেন। এ সময় দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
এদিকে বসে নেই সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী জায়েদা খাতুনও। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তিনি আজ সকালে মহানগরীর সাবেক কাউলতিয়া ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি এলাকা হতে গণসংযোগ শুরু করেন। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে সালনা, নগপাড়া, তেলীপাড়া, চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া, বাসন, বোর্ডবাজার, পূবাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় মায়ের পক্ষে গণসংযোগ করেছেন। ঘুরেছেন বিভিন্ন হাটবাজার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এলাকায়। এ সময় তিনি নগরীর উন্নয়নের নানা আশ্বাস দিয়ে ভোটারদের কাছে মায়ের জন্য টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট চান।
গণসংযোগকালে বিভিন্ন পথসভায় জাহাঙ্গীর আলম ভোটের কারণে ঐতিহ্যবাহী গাজীপুর যেন কলঙ্কিত না হয়, ভোটের অধিকার যেন জনগণ বুঝে পায় এ দাবি করেন।
অপরদিকে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন আজ দুপুরে সদর থানার জয়দেবপুর এলাকার সাহাপাড়া জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। তিনি জয়দেবপুর বাজার এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি ভোটারদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন এবং তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মাওলানা গাজী আতাউর রহমান আজ দুপুরে জেলা শহরের গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এ সময় তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন এবং হাতপাখা প্রতীকে ভোট চান। এদিন তিনি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দিনভর সদর ও টঙ্গী থানার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও এলাকায় গণসংযোগ করে ব্যস্ত সময় কাটান। তিনি একাধিক পথসভায়ও বক্তব্য দেন।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বিগত দিনে যাঁরা সিটি করপোরেশনে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁদের অস্বাভাবিক ট্যাক্স নির্ধারণের কারণে নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অথচ বাড়েনি নাগরিক সুবিধা। সম্পদ ও সেবা না বাড়লেও দুটি পৌরসভা এবং কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ সিটি করপোরেশনবাসীর ট্যাক্সের বোঝা ঠিকই বেড়েছে। যেখানে কোনো নাগরিক সুবিধা নেই, এমনকি শিল্পকারখানাও নেই। সেসব পল্লী এলাকার মানুষের কোনো মতামত না নিয়ে সিটি করপোরেশনের আওতায় ফেলে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ট্যাক্সের বোঝা। এ অবস্থার পরিবর্তনে হাতপাখা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য তিনি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি দিনভর গণসংযোগের মাধ্যমে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তিনি সকালে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকা হতে গণসংযোগ শুরু করেন। দুপুর পর্যন্ত তিনি নতুন বাজার, ব্যাংকের মাঠ, টঙ্গী রেলওয়ে জংশন গোল চত্বর, নোয়াগাঁও, তিস্তার গেট, ফাইসন্স রোড ও চেরাগ আলী মার্কেট এলাকায় গণসংযোগ করেন। দুপুরে তিনি বোর্ড বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় ও মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। জুমার নামাজের পর তিনি টঙ্গী মিরাশপাড়া এলাকার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিবাহোত্তর বৌভাত) যোগদান করেন এবং মিরাশপাড়া ও আরিচপুর মধুমিতা রোড এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিকেলে তিনি কাশিমপুর থানা এলাকার ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগ করেন।
এ ছাড়া মেয়র পদের অন্য প্রার্থীরাসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরাও নিজেদের নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ করেন এবং ভোটারদের কাছে ভোট চেয়ে ব্যস্ত সময় কাটান।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার এ এইচ এম কামরুল হাসান জানান, আগামী ২৫ মে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সর্বশেষ হালনাগাদ করা ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২, মহিলা ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ১৮। নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য মোট ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ তিন হাজার ৪৯৭টি, এরমধ্যে ৪৯১টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে।