জালিয়াতি ঠেকাতে প্রয়োজন ইএমভি কার্ডের প্রচলন
অটোমেটেড টেলার মেশিনে (এটিএম) কার্ডের তথ্য দ্রুত পাঠ ঠেকানোর যন্ত্রাংশ (অ্যান্টি স্কিমিং) ও পিনরক্ষক যন্ত্রাংশ (পিনশিল্ড) স্থাপন করলেই জালিয়াতি পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব না। সন্তোষজনক নিরাপত্তার জন্য উন্নত প্রযুক্তির চিপযুক্ত ইএমভি কার্ডের প্রচলন করতে হবে। আর এটিএম বুথগুলোকেও ইএমভিতে রূপান্তর করতে হবে।
urgentPhoto
বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমন তাগিদ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ইএমভি কার্ড প্রচলনের পরিকল্পনা আছে। তবে পুরোপুরিভাবে তা বাস্তবায়নে অনেক সময় লাগবে।
সম্প্রতি এটিএম বুথে কার্ডের তথ্য ও পিন চুরি করে, নকল কার্ড বানিয়ে গ্রাহকদের হিসাব থেকে কয়েক লাখ টাকা তুলে নেয় একটি চক্র। এ ক্ষেত্রে এটিএমে দ্রুত তথ্য পাঠ করতে পারে এমন যন্ত্রাংশ বসিয়ে ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ-যুক্ত (চৌম্বকীয় চিহ্ন বা দাগ) কার্ডের তথ্য চুরি করা হয়।
বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের সাড়ে সাত হাজার এটিএম বুথ আছে। এসব এটিএম বুথে এক মাসের মধ্যে অ্যান্টি স্কিমিং ও পিনশিল্ড ডিভাইস বসানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু আগে থেকেই দেড় হাজার বুথে অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস বসিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
চিপযুক্ত ইএমভি কার্ড ও বুথ ছাড়া এটিএম লেনদেনকে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আবুল কাশেম মো. শিরীন বলেন, ‘ভিসা মাস্টারকার্ড কিন্তু অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইসকে তার আমলে নিয়ে লায়াবিলিটি (যোগ্যতা) শিফট করে। লায়াবিলিটি শিফটের যে নিয়ম করা হয়েছে যে কে টাকা দেবে, সেটা কিন্তু করা হয়েছে ইএমভির ওপর নির্ভর করে। এর মানে আমাদের নিরাপত্তার জন্য প্রাধান্য দিতে হবে ইএমভিকে। অবশ্যই চিপ কার্ড করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজন অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস।’
বিশ্বব্যাপী এটিএম জালিয়াতির কারণে ইউরো পে, মাস্টারকার্ড ও ভিসা—এ তিনটি প্রতিষ্ঠান এক হয়ে একটি গবেষণা করে। এর ফলাফল হিসেবে ১৯৯৩ সালে তারা চিপযুক্ত ইএমভি কার্ডের প্রচলনের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে খরচ বেশি হওয়ার কারণে সব দেশে এখনো তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বাংলাদেশে ও কিছু ব্যাংক ইএমভি কার্ড চালু করলেও বেশির ভাগ বুথই এখনো ইএমভি গ্রহণের অযোগ্য। এখানে ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ কার্ডের প্রচলনই বেশি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুরোপুরি ইএমভিতে রূপান্তর করাটা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে পর্যায়ক্রমে তা করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘ইএমভি চিপযুক্ত কার্ড করলেই হবে না, বুথও ইএমভিতে রূপান্তর করতে হবে। কিন্তু এটা তো একদিনে সম্ভব নয়। তবে আমাদের ধীরে ধীরে ওই দিকেই যেতে হবে। কবে নাগাদ ওই দিকে যাওয়া যাবে, তার পরিকল্পনা করতে হবে। যতই ডিজিটাইজেশনের দিকে যাওয়া হবে, ততই কিন্তু নিরাপত্তার হুমকি আসছে। ফলে আরো শক্ত হতে হবে। এটি ধারাবাহিকভাবে করা হচ্ছে।’
সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির বিষয় হচ্ছে জালিয়াতির মাধ্যমে এটিএম থেকে কোনো গ্রাহকের টাকা তুলে নেওয়া হলে, সেই টাকা ব্যাংকের কাছ থেকেই তিনি ফেরত পাবেন।