গাজীপুরে মধ্যরাতে শেষ নির্বাচনী প্রচারণা, ভোট বৃহস্পতিবার
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। আগামী বৃহস্পতিবার দেশের সবচেয়ে বড় এ সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা। ফলে, শেষ মুহূর্তে জমে ওঠে প্রার্থীদের প্রচারণা। এদিকে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন ভোটে ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। আজ মঙ্গলবার (২৩ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এতথ্য জানান তিনি। সে হিসেবে ৭৩ শতাংশ কেন্দ্রই পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায়।
মঙ্গলবার প্রচারণার শেষ দিকে ব্যস্ত সময় পার করেন মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। তারা দিনরাত বিরামহীন প্রচারণা চালান যেন কারও দম ফেলার ফুরসত নেই। প্রচারে গিয়ে প্রার্থীরা ভোটারদের নানামুখী উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন।
এদিকে, ভোটাররাও বলছেন, নাগরিক সমস্যা সমাধান, রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার প্রতিশ্রুতি যিনি রক্ষা করতে পারবেন বলে মনে হবে, ভোটটা তাকেই দেবেন তারা।
ভোটারদের জানান, ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আজমত উল্লা খান। এর আগে তিনি ১৮ বছর টঙ্গী পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে আগে থেকে আজমতের প্রভাব রয়েছে। বিএনপি অংশ না নেওয়ায় আজমত উল্লা এই সুবিধাটা পেতে পারেন। তবে, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন তার জন্য কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াতে পারেন।
এদিকে প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদার। গত রোববার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে উপমহাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভোট হবে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। গতকাল সোমবার তিনি বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কেনো অনিয়ম হলে গাইবান্ধার চেয়েও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে গাজীপুর সিটিতে। ইতোমধ্যে নির্বাচনে সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও এজেন্টদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা বিধানকল্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্রসহ একজন এসআই অথবা এএসআই ও চারজন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ একজন আনসার, একজন অস্ত্রসহ এপিসি, লাঠিসহ চারজন মহিলা ও ছয়জন পুরুষ আনসার-ভিডিপি সদস্যসহ ১৭ জন মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্রসহ একজন এসআই অথবা এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ একজন আনসার, একজন অস্ত্রসহ এপিসি, লাঠিসহ চারজন মহিলা ও ছয়জন পুরুষ আনসার-ভিডিপি সদস্যসহ ১৬ জন মোতায়েন থাকবে।
ইসি মো. আলমগীর বলেন, ‘আমাদের কাছে ৪৮০টি কেন্দ্রের সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫১টি কেন্দ্র। আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
গত ৩ এপ্রিল পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে আগামী বৃস্পতিবার গাজীপুর সিটিতে ভোটের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন এবং মহিলা ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার আছেন ১৮ জন। ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।