মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার স্টেটমেন্টকে স্বাগত জানাই : আমীর খসরু
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত স্টেটমেন্টকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তার প্রতিফলন হিসেবে এগুলো আসছে। অন্য কোনো দেশের নির্বাচন নিয়ে তো আলোচনা হচ্ছে না, আমাদের পার্শ্ববর্তী চার পাঁচটি দেশ কারো নির্বাচন নিয়েই আলোচনা হচ্ছে না। বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে যে উৎকণ্ঠা, যে শঙ্কা বাংলাদেশের মানুষ তাদের পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে কি না? এই শঙ্কা থেকেই এই বিষয়গুলো উঠে আসছে। তার মধ্যে এটা একটা পদক্ষেপ, যেটা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসছে।”
আমীর খসরু বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আবারও নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি পারবে না? নাকি তারা আবারও বঞ্চিত হবে, এই শঙ্কা এই উৎকণ্ঠা। মার্কিন স্টেটমেন্ট এটা স্পেসিফিক ভাবেই শুধু বাংলাদেশ নিয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর অন্য কোন দেশ নিয়ে নয়। এটা বাংলাদেশের সংগঠনগুলোকে প্যাসিফিক বলছে, ব্যক্তিকে বলছে। এটা একেবারে কম্প্রিহেনশিভলি, যারা নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দখল করার জন্য ভোট চুরির মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য, যত ধরনের সংগঠন ব্যক্তি তাদেরকে সরাসরি বলেছে- এমনকি এর মাধ্যমে বিচার বিপক্ষেও সম্পৃক্ত করে কথা বলছে। নির্বাচনকে ঘিরে যারা ওই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবে তাদের ভিসা বাতিল করা হবে এবং ভবিষ্যতে তাদেরকে আর ভিসা দেওয়া হবে না।”
আমীর খসরু বলেন, “শুধু নির্বাচনের দিন ভোট চুরি নয় প্রতিদিনে ভোট চুরি চলছে। প্রতিদিন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, প্রতিদিন মামলা দেওয়া হচ্ছে, গুলি করে হত্যা করা এটাও তো ভোট চুরি। আমাদের মিটিং মিছিল ভেঙে দেওয়া এটাও তো ভোট চুরি। সেজন্যই আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যারা ভোট চুরির সঙ্গে সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদেরকে এড্রেস করেছে এবং সবার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।”
মার্কিন স্টেটমেন্টেতো বিএনপির উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, “কেন? আমরা তো ওয়েলকাম করছি। আমরা সাধুবাদ জানাই। কারণ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে এই ধরনের পদক্ষেপ একটি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এটার মাধ্যমে যে সবকিছু হবে তা নয়। তবে এটা একটা সিগন্যাল-মেসেজ যে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারছে না। দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ভোটের দিন ছাড়াও এখানে যে প্রতিদিন ভোট রেগিং হচ্ছে সেজন্য হলেও আমরা মার্কিনদের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। যাদেরকে সরাসরি মেনশন করে বলেছে এটা একটা বড় মেসেজ। তারা যদি সেটা আমলে না নিয়ে আবারও বাংলাদেশের মানুষের ভোট চুরি প্রক্রিয়ায় জড়িত হয়, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের চিন্তা করা দরকার।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “এখানে তো বলা হচ্ছে ভোট চুরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত; বিএনপি তো ভোট চুরির সঙ্গে জড়িত নাই। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে উদ্বিগ্ন না থাকলে ভালো কথা। বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার মানবাধিকার আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার এগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে। এগুলো ফিরিয়ে না দিলে তাদেরকে উদ্বিগ্ন হতে হবে। উদ্বিগ্ন নাই বললে তো হবে না; এগুলো যদি ফিরিয়ে না দেয়, সামনের দিনে আবারও যদি ভোট চুরির মাধ্যমে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা থাকে।”
মার্কিনদের এই ধরনের উদ্যোগকে সফলতা হিসেবে দেখছে কি না এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, “এখানে সফলতার কিছু নেই। সফলতা সেদিন হবে যেদিন বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে তাদের সরকার গঠন করতে পারবে। সেটাই হবে বাংলাদেশের মানুষের সফলতা। সেই উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ তার মধ্যে এটি একটি ভালো পদক্ষেপ। সকলের প্রতি একটা পরিষ্কার বার্তা, এর চেয়ে পরিষ্কার বার্তা কিছু হতে পারে না। কারণ এখানে স্পেসিফিকভাবে নাম ধরে ধরে ব্যক্তি সংগঠনগুলোর কথা বলা হয়েছে।”
মার্কিন প্রশাসনের চাপে বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষকেই আদায় করতে হবে। আমাদের দাবি বাংলাদেশে আগামীদিনে গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না, আইনের শাসন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, জীবনের নিরাপত্তা সব মিলিয়ে মুক্তি সংগ্রামের পথে একটা পদক্ষেপ। এখানে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে করে তারা আবার জোর করে ভোট দখল করে ক্ষমতা দখল করতে না পারে।”
নির্বাচন আসতে আরও ছয়-সাত মাস, এখনই এই ধরনের বার্তা আসলে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, “যে ব্যক্তি সরাসরি জড়িত থাকবে কিংবা নির্দেশ দিবে শুধু তারা নয় তাদের পরিবারও কিন্তু এর আওতায় পড়বে এবং ভিসা থেকে বঞ্চিত হবে। তাদের সবার ভিসা বাতিল করা হবে। যেহেতু বাংলাদেশে এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নাই, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই, নির্বাচন তো পরের কথা। আগে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকতে হবে, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে। মানবাধিকার আইনের শাসন জনগণের সাংবিধানিক অধিকার সভা সমাবেশসহ সর্বক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত। তাইতো এই ধরনের প্রশ্নগুলো এখন আসছে। যেহেতু এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষ কথা বলতে পারছে না, তাদের বাক স্বাধীনতা নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই, তারা আগামী নির্বাচনে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। স্টেটমেন্ট তাই এত আগে দেওয়া হয়েছে- কারণ ভোট চুরিতো ভোটের দিন হবে না, ভোট চুরি তো এখন থেকেই চলছে, গণহত্যা চলছে। নির্বাচনের দিন ভোট হবে না, ভোট এখন থেকে শুরু হয়ে গেছে।”