ম্যাককালামের আবেগঘন বিদায়
জীবনের শেষ টেস্টে তিনি ব্যক্তিগত সাফল্যে উদ্ভাসিত, তবে তাঁর দল পরাজিত! দ্রুততম শতক আর সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড গড়লেও ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের হার ঠেকাতে পারেননি ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। সাত উইকেটে জিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। খেলাশেষে আবেগঘন সংবর্ধনা পেলেও ম্যাককালাম জানিয়েছেন, বিদায়বেলায় নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই তাঁর।
৫৩ রানে অপরাজিত অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ সবার আগে করমর্দন করে বিদায় জানিয়েছেন ম্যাককালামকে। অস্ট্রেলীয়দের সংবর্ধনাটাও ছিল দেখার মতো। ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের বিদায়বেলা স্মরণীয় করে রেখেছে ভারতকে হটিয়ে টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান ফিরে পাওয়া স্মিথের দল।
৫৪ বলে দ্রুততম শতক আর সবচেয়ে বেশি ১০৭টি ছক্কার রেকর্ড গড়া ম্যাককালাম অবশ্য জীবনের শেষ টেস্টে পরাজয়ের আক্ষেপ লুকিয়ে রাখতে পারেননি, ‘বিদায়ের জন্য এটা হয়তো আদর্শ উপলক্ষ নয়। তবে একই সঙ্গে আরেকটি কথাও বলতে চাই। ক্রিকেট মাঠে আমি দারুণ সময় কাটিয়েছি। এই টেস্ট আর সিরিজ হেরে যাওয়ায় আমরা অবশ্যই হতাশ। তবে এটাও ঠিক যে যোগ্য দলেরই জয় হয়েছে।’
তবে ৩৪ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেও তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই ম্যাককালামের। যদিও অস্ট্রেলীয়দের কাছ থেকে বিদায়ী সম্মান পেয়ে তিনি আপ্লুত, ‘বিদায়ের এটাই সঠিক সময়। সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সময়ই আমার এ উপলব্ধি হয়েছে। যদিও জানতাম যে আরো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা আছে আমার। যখন কারো ক্যারিয়ার শেষ হয়, তখন অন্য ক্রিকেটাররা তাঁকে এভাবেই সম্মান জানাতে চায়। তবে আপনারা হয়তো এর আগে কখনো স্টিভ স্মিথ আর অস্ট্রেলিয়া দলের দেওয়া গার্ড অব অনারের মতো এ রকম সম্মান প্রদর্শন দেখেননি।’ সতীর্থ আর প্রতিপক্ষের কাছ থেকে এখন একটাই প্রত্যাশা ম্যাককালামের, ‘আশা করি, আমি যাদের সঙ্গে খেলেছি, তারা আমাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে মনে রাখবে।’
একজন সাধারণ ক্রিকেটভক্তের পক্ষে মানুষ ম্যাককালামের নাগাল পাওয়ার কথা নয়। তবে ক্রিকেটবিশ্ব তাঁর কথা মনে রাখবেই। ব্যাট হাতে যে অনেক কীর্তি গড়ে সতীর্থদের কাছ ‘বাজ’ নামে পরিচিত ম্যাককালাম। ১০১ টেস্টে ১২টি শতক আর ৩১টি অর্ধশতকসহ তাঁর রান ছয় হাজার ৪৫৩। দুই বছর আগে একমাত্র নিউজিল্যান্ডার হিসেবে ভারতের বিপক্ষে ত্রিশতকও (৩০২) করেছেন তিনি। কিউইদের পক্ষে একটানা টেস্ট খেলার (১০১টি) রেকর্ডও তাঁর অধিকারে। ২০০৪ সালে অভিষেকের পর একটি টেস্টও মিস করেননি। জিওফ হাওয়ার্থের পর নিউজিল্যান্ডের সফলতম টেস্ট অধিনায়কও ম্যাককালাম। হাওয়ার্থের অধীনে কিউইদের টেস্ট জয়ের হার ৩৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর অধিনায়ক ম্যাককালাম জিতেছেন ৩৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ টেস্ট।
টি-টোয়েন্টিতে তো তাঁর অসামান্য কীর্তি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে সবচেয়ে বেশি রান (২১৪০), সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি (দুটি), ফিফটি (১৩টি), ছক্কা (৯১টি) আর চারের (১৯৯টি) সব রেকর্ড ম্যাককালামের দখলে।
এমন একজন ব্যাটসম্যানকে মনে না রেখে উপায় আছে!