জেলখানায় যেভাবে থাকতেন সঞ্জয় দত্ত
২০১৩ সালের মে মাস থেকে ২০১৬-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি। মাঝে লম্বা সময় ছুটিও পেয়েছেন প্যারোলের সুবাদে। তবে ইয়েরওয়াড়া জেলখানার ভেতরটা বলিউডের সুপারস্টার সঞ্জয় দত্তের জন্য একেবারেই বদলে গিয়েছিল, এমনটা ভাবলে ভুল করবেন। আর সব কয়েদীদের মতোই কারাজীবন পেরিয়েছে সঞ্জয়ের। বিবিসির খবরে জানা গেল, কারাগারে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেলেও কঠোর নজরদারি থাকত ‘সঞ্জুবাবা’র দিকে।
কারাগারে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন সঞ্জয়। সেখানে তিনি একটি আভ্যন্তরীণ রেডিও স্টেশনে অনুষ্ঠানও নাকি পরিচালনা করতেন জকি হিসেবে। ভালো ব্যবহারের সুবাদের ১৪৪ দিন আগে ছাড়া পেয়েছেন, যার মধ্যে অন্য কয়েদীদের সাথে ভালো ব্যবহার করার বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় এসেছে।
সঞ্জয়ের জেলখানার জীবন নিয়ে সবারই আগ্রহ- কীভাবে থাকতেন তিনি? কোথায় থাকতেন, কেমন করে চলাফেরা করতেন সেই স্থানে? সঞ্জয়ের কয়েকজন ‘সাবেক’ সহকয়েদী এ বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন।
সঞ্জয় থাকতেন ১০ ফুট লম্বা, আট ফুট চওড়া একটি সেলে। তিনি কয়েদিদের সাদা পোশাকও পরতেন। তাঁর কারাকক্ষের সামনে একটি একশ বর্গফুট আকৃতির বাগান ছিল। প্রহরীদের নজরদারি থাকা অবস্থায় সেখানে চলাফেরার অনুমতি ছিল তাঁর।
কয়েদীদের মধ্যে সঞ্জয়ের ঘনিষ্ঠ একজন জানান, এই জেলখাটা কয়েদীর জীবনযাপনকে সঞ্জয় নিয়তির লিখন হিসেবেই মেনে নিয়েছিলেন। তবে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি যে খানিকটা আগে ছাড়া পেতে পারেন, সে বিষয়ে তাঁর ধারণা ছিল।
সঞ্জয়ের বন্ধুপ্রতীম এই সহকয়েদী বলেন, ‘ওঁর সাথে আমার প্রায়ই কথা হতো। কারণ আমি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করতাম। আর উনি আমার কাছ থেকে নিয়মিত বই নিতেন। সপ্তাহে কম করে হলেও দুটো করে বই নিতেন বাবা (সঞ্জয়)। অনেক পড়তেন তিনি, বিশেষ করে মুনশি প্রেমচন্দের হিন্দি সাহিত্য।’
জেলখানায় নাকি টিভি দেখারও সুযোগ ছিল না সঞ্জয়ের? -এ বিষয়ে সেই কয়েদী বলেন, ‘আমাদের সময় কাটানোর জন্য কিছু বন্দোবস্ত ছিল। প্রতি ১৫০ জন কয়েদীর জন্য ছিল একটি করে টিভি। কিন্তু বাবার কারাকক্ষ ছিল হাই-সিকিউরিটি সেল, ওনার টিভি দেখার সুযোগ ছিল না। উনি সারাদিন পত্রিকার মধ্যেই ডুবে থাকতেন।’
ইয়েরওয়াড়া জেলের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা যায়, সঞ্জয় প্রতিদিন ভোর ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠতেন। খানিক বাদেই তিনি গোসল করে নিতেন। এর পর তাঁকে চা ও সকালের নাশতা দেওয়া হতো। এরপর জেলের কর্মীরা তাঁকে পত্রিকা থেকে কাগজের ঠোঙা বানানোর সরঞ্জাম ও রসদ এনে দিত। তিনি সাধারণত পুরো সকালের সময়টাই ঠোঙা বানিয়ে পার করে দিতেন। প্রতি ১০০টি ব্যাগের বিনিময়ে তিনি ৪৫ রুপি আয় করতেন। দুপুরের একটু আগে তাঁকে কারাগারের অভ্যন্তরীণ রেডিও স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হতো, যেখানে তিনি ‘রেডিও ওয়াইসিপি’ (ইয়েরওয়াড়া সেন্ট্রাল প্রিজন) নামে একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতেন।
অনুষ্ঠানের কাজ হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা তাঁকে ‘কমন এরিয়া’তে নিয়ে যেতেন। সেখানে তিনি সবার সাথে কথা বলার এবং ব্যায়াম করার সুযোগ পেতেন।
দুপুর ২টা দিকে তাঁকে নিজের কক্ষে ফিরিয়ে নেওয়া হতো এবং খাবার দেওয়া হতো। দুপুরের খাওয়ার একটু পর তাঁকে আবারো রেডিও অনুষ্ঠান চালানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হতো। সাড়ে ৫টার মধ্যে তাঁকে দিয়ে দেওয়া হতো রাতের খাবার। সন্ধ্যে ৬টার মধ্যে তাঁর কক্ষে তালা মেরে দেওয়া হতো। পরের দিন ভোর পর্যন্ত তালাবদ্ধ অবস্থাতেই সময় কাটাতে হতো প্রতাপশালী এই তারকাকে।
তারকাখ্যাতি ছাড়াও আচার-আচরণের জন্য কয়েদীদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন সঞ্জয়। জেলখানার কঠিন জীবনে বলিউডি তারকার হাঁকডাক নয়, বরং সাধারণ একজন ভালো মানুষের মতো ব্যবহারই যে আবশ্যক—তা তিনি বুঝেছেন বটে!