জয়ের সুবাস নিয়ে দিন শেষ করল বাংলাদেশ
টেস্ট ক্রিকেটে এতটা নির্ভার বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই আফগানিস্তানের বিপক্ষেই অতীত অভিজ্ঞতা ছিল তিক্ততায় ভরা। সেই আফগানদের নিয়ে এবার ছেলেখেলা করছে বাংলাদেশ। কী ব্যাটিং, কী বোলিং—দুই বিভাগেই বাংলাদেশের আধিপত্য! তাতে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনেই জয়ের সুবাস বাংলাদেশ শিবিরে। জয়ের অপেক্ষায় থেকে টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ করল লিটন দাসের দল।
আজ শুক্রবার (১৬ জুন) একমাত্র টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে চতুর্থ ইনিংসে আফগানিস্তানের স্কোর দুই উইকেটে ৪৫ রান। দিন শেষে উইকেটে ছিলেন রহমত শাহ ও নাসির জামাল। দিন শেষে ৬১৭ রানে পিছিয়ে সফরকারীরা।
ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে স্কোরবোর্ডে ৪২৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। আগের ইনিংসের লিডসহ বাংলাদেশের মোট সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৬৬১ রানে। সুতরাং জয় পেতে হলে আফগানিস্তানকে করতে হবে ৬৬২ রান।
টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে প্রতিপক্ষকে দেওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লক্ষ্য এটি। এর আগে ২০২১ সালে হারারেতে সর্বোচ্চ ৪৭৭রান লক্ষ্য দিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে জয়ও এসেছিল ২২০ রানে। তা ছাড়া এই রান তাড়া করে জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হবে আফগানদের। কারণ মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ তাড়ার ইনিংস হলো ২০৯। যেটা আছে ইংল্যান্ডের দখলে। এবার আফগানরা এই ‘অসম্ভব’ রেকর্ড গড়তে পারে কি না সেটাই দেখার।
আজ দিনের তৃতীয় সেশনে এসে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। তখন উইকেটে অপরাজিত ছিলেন সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক ও হাফসেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস। ব্যাটিং ছাড়ার আগে মুমিনুল অপরাজিত ছিলেন ১২১ রানে। ১৪৫ বলে যা সাজানো ছিল ১২ বাউন্ডারি আর এক ছক্কা দিয়ে। অধিনায়ক লিটন অপরাজিত ছিলেন ৮১ বলে ৬৬ রানে।
এই টেস্টে বাংলাদেশ এতটাই নির্ভার যে হারানোর নেই কিছু। বৃষ্টির বাধা ছাড়া জয় বঞ্চিত হওয়ারও সুযোগ কম। তাই রীতিমতো রান তোলার উৎসব চলে। শেরেবাংলার ঘাসের উইকেটে সেই উৎসবটা নিজেদের মতো করেই রাঙান বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
বিশেষ করে নাজমুল হোসেন শান্ত। যিনি প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি তোলার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও পেয়েছেন শতকের দেখা। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হওয়া মুমিনুলও পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। সেই সঙ্গে দুই ইনিংস মিলিয়ে রানের দেখা পেয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, লিটন দাসরা। সবমিলিয়ে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনেও শেরেবাংলায় চলে বাংলাদেশের দাপট।
৩৭০ রানের পুঁজি নিয়ে আজ তৃতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। বরাবরের মতো ব্যাট হাতে আধিপত্য ধরে রাখেন বাংলাদেশের ব্যাটারা। বিশেষ করে, নাজমুল হোসেন শান্তর টানা সেঞ্চুরির পর মুমিনুলের দৃঢ়তায় আফগানদের পাহাড়সম লক্ষ্য ছুড়ে দেয় স্বাগতিকরা।
টানা সেঞ্চুরি পাওয়া শান্ত আজ থেমেছেন ১২৪ রানে। ১৫১ বলে তিনি হাঁকান ১৫টি বাউন্ডারি। এ ছাড়া জাকির হাসান উপহার দেন ৭১ রানের দারুণ ইনিংস। ব্যাটারদের দৃঢ়তায় দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ খেলেছে ৮০ ওভার। তাতেই স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছে শক্ত পুঁজি।
এর আগে প্রথম ইনিংসে শান্তর সেঞ্চুরিতে ৩৮২ রান করেছিল বাংলাদেশ। শান্ত একাই করেছিলেন ১৪৬ রান। জবাবে প্রথম ইনিংসে নেমে ১৪৬ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। তাতে ২৩৬ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এবার সেই লিড হয় বাংলাদেশের পুঁজি ৬৬১। যা তাড়া করতে নেমে দুই উইকেট হারিয়ে দিন শেষে ব্যাকফুটে ছিল আফগানিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৮৬ ওভারে ৩৮২ (জয় ৭৬, জাকির ১, শান্ত ১৪৬, মুমিনুল ১৫, লিটন ৯, মুশফিক ৪৭, মিরাজ ৪৮, তাসকিন ২, তাইজুল ০, শরিফুল ৬, ইবাদত ০*; ইয়ামিন ১০-১-৩৯-২, মাসুদ ১৬-২-৭৯-৫, করিম ১১-৩-৩৩-০, জাহির ১৬-০-৯৮-১, হামজা ২৪-১-৮৫-১, শাহিদি ৩-০-৯-০, রহমত ৬-১-৩০-১)।
আফগানিস্তান প্রথম ইনিংস : ৩৯ ওভারে ১৪৬ (ইব্রাহিম ৬, মালিক ১৭, রহমত ৯, শাহিদি ৯, জামাল ৩৫, জাজাই ৩৬, জানাত ২৩, হামজা ৬, আহমাদজাই ০, মাসুদ ০, জাহির ০*; তাসকিন ৭-০-৪৮-০, শরিফুল ৮-২-২৮-২, ইবাদত ১০-১-৪৭-৪, তাইজুল ৫-০-৭-২, মিরাজ ৯-১-১৫-২)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৮০ ওভারে ৪২৫/৪ ডিক্লেয়ার (জয় ১৭, শান্ত ১২৪, জাকির ৭১, মুমিনুল ১২১*, লিটন ৬৬*, মুশফিক ৮ ; ইয়ামিন ১৩-১-৬১-০, মাসুদ ১২.৫-১-৮৩-০, হামজা ১৬.১-০-৯০-১, করিম ৮-০-৪৮-০, জাহির ২৩-০-১১২-২, শাহিদি ৩-০-১৯-০)।
আফগানিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস : ১১ ওভারে ৪৫/২ (জাদরান ০, মালিক ৫, রহমত ১০*, শাহিদি ১৩, জামাল ৫*; শরিফুল ৪-১-৬-১,তাসকিন ৪-০-২৮-১,তাইজুল ২-০-৬-০, মিরাজ ১-০-১-০)।