তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত ভারতের উত্তরাঞ্চল, অন্তত ৩৪ বৃদ্ধের মৃত্যু
তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত ভারতের উত্তরাঞ্চল। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে গরমে দেশটির উত্তর প্রদেশে অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার (১৭ জুন) দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানিয়েছে। একইসঙ্গে তারা ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের দিনের বেলায় ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। খবর আল-জাজিরার।
প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, দাবদাহে উত্তর প্রদেশে যারা মারা গেছেন, তাদের সবার বয়স ষাটের বেশি। আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন তারা। তীব্র গরমে তাদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনৌ থেকে ৩০০ কিলোমিটার (২০০ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বের বাল্লিয়া জেলায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার ২৩ জন ও শুক্রবার ১১ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছেন বাল্লিয়ার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপিকে এক সাক্ষাৎকারে আজ জয়ন্ত কুমার বলেন, ‘মারা যাওয়া সকল ব্যক্তিই কোনো না কোনো রোগে ভুগছিলেন। তীব্র গরমে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।’
অধিকাংশ মৃত্যু হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্টোক ও ডায়রিয়ার কারণে হয়েছে বলেও জানান জয়ন্ত কুমার।
তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আরও দুজন ভর্তি হয়েছে জানিয়ে দিওয়াকার সিং নামের আরেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘শহরের প্রধান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ওই দুজন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বয়স্করা তীব্র গরমের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের ডেটা অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার বাল্লিয়াতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৮ ফারেনহাইট), যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চার দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, তীব্র দাবদাহের জন্য রাজ্যজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। এতে করে বেশ কষ্টে রয়েছে প্রদেশটির বাসিন্দারা। প্রতিবাদে অনেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে।
ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জনগণকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘সরকার রাজ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ তিনি জনগণকে সহযোগিতা করার ও বিদ্যুতের সুষ্ঠু ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দেশটিতে গ্রীষ্ম ঋতু থাকে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। এ সময়ে দেশটিতে তীব্র গরম অনুভূত হয়। বর্ষা আসার আগ পর্যন্ত এমনটা চলতে থাকে। তবে, গত এক দশকে তাপমাত্রা বেড়েই চলছে।
কেন এত গরম পড়ছে সে নিয়ে গবেষণারত সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গত এপ্রিল দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অংশে তীব্র দাবদাহ হয়। এটি আগের থেকে ৩০ গুণ বেশি ছিল।
গত এপ্রিলে ভারতে অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাইয়ে তীব্র গরমে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ১৩ জন মারা গিয়েছিল। এর ফলে শহরটির সমস্ত স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল।