কোরবানির পশু বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত ১৯ হাজার ২৪৪ পরিচ্ছন্নকর্মী
কোরবানির পশু বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এজন্য প্রায় ১৯ হাজার ২৪৪ জন পরিচ্ছন্নকর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোরবানির পশু বর্জ্য অপসারণে দুই সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দ্রুত ও নির্ধারিত সময়েই বর্জ্য অপসারণে হটলাইন খোলা থাকবে এবং বর্জ্য অপসারণের প্রায় ১১ লাখ প্লাস্টিক ও পলিব্যাগ সরবরাহ করবে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ।
সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে বর্জ্য অপসারণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন দুই মেয়র। আসন্ন কোরবানির ঈদে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রায় পাঁচ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। এসব পশু থেকে কমপক্ষে ৩০ হাজার টন বর্জ্য সৃষ্টি হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের গণমাধ্যমকে জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অধিক্ষেত্রভুক্ত এলাকায় কোরবানির পশুর হাট এবং কোরবানি করা পশুর সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সরেজমিনে তদারকির লক্ষ্যে ডিএসসিসির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদারকি পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিবহণ বিভাগ ও যান্ত্রিক বিভাগের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
দক্ষিণ সিটির এই কর্মকর্তা জানান, কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পাঁচ হাজার ৩০০ পরিচ্ছন্নকর্মী, ৭৫টি ওয়ার্ডে নিয়োজিত প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার কর্মী এবং পশুর হাটের জন্য ৬৩০ জন বাহিরের শ্রমিকসহ সর্বমোট প্রায় আট হাজার ৯৩০ জন পরিচ্ছন্নকর্মী পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত থাকবে। পশুর হাটের বর্জ্য, কোরবানি করা পশুর বর্জ্য অপসারণ ও রাস্তা ধৌতকরণ পরবর্তী পর্যাপ্ত জীবানুনাশক (স্যাভলন) ও ৩২ হাজার ৫০০ কেজি বা এক হাজার ৩০০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক ইতোমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসেন শিমুল গণমাধ্যমকে জানান, আসন্ন কোরবানির পশু বর্জ্য অপসারণে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য দুই লাখের বেশি লিফলেট বিতরণ, প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং, প্রতিটি মসজিদের ইমাম সাহেবদের মাধ্যমে নামাজের পরে এবং জুমার খুতবার সময় কোরবানি পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে মুসুল্লিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব দুই লাখ ১১৭ জন এবং অন্যান্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়সহ সর্বমোট ১০ হাজার ৩১৪ জন কর্মী কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োগ করা হয়েছে। এরমধ্যে অঞ্চল ভিত্তিক বর্তমান জনবলের সংখ্যা দুই হাজার ১১৭, ৩৬টি ওয়ার্ডে পিডব্লিউসিএসপির কর্মী চার হাজার ৫০০ জন, ২৬টি ওয়ার্ডে বেসরকারি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দুই হাজার ৬৬৩ জন, স্পেশাল ক্লিনার ৪২২ জন।
শিমুল জানান, বর্জ্য ব্যাগ, ব্লিচিং পাউডারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত উপকরণ সম্মানিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এরমধ্যে রয়েছে পলিব্যাগ ৯ লাখ পিস, বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ এক লাখ পিস, ব্লিচিং পাউডার দুই হাজার ৪০০ বস্তা (৬৭ টন), স্যাভলন ৯০০ ক্যান (প্রতি ক্যান পাঁচ লিটার), টুকরী সাত হাজার, ফিনাইল এক হাজার ৬০০ লিটার (প্রতি ক্যান এক লিটার)। এছাড়া, কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে প্লট-২৩-২৬, সড়ক-৪৬, গুলশান-২, নগর ভবন নীচ তলায় অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর: +৮৮০২৫৫০৫২০৮৪, ১৬১০৬।
কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ২৪ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে তদারকি করার জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা ঈদের ছুটিকালীন কর্মস্থলে অবস্থান করার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।