আর্জেন্টিনার স্বপ্নযাত্রার দুই বছর
‘দুই বছর!’ ঠিক এই দুই শব্দেই আজ মঙ্গলবার (১১ জুলাই) নিজের ইন্সট্রাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি ছবি পোস্ট করেন লিওনেল মেসি। তাতে দেখা যায়, আকাশী-নীল জামা পরে একদল ছেলে সামনের দিকে তাকিয়ে হাসছেন। আরেকজন গুটি গুটি পায়ে অতিকায় এক ট্রফি হাতে তাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, মাত্র অল্প কিছুক্ষণ আগে পাওয়া একজন মানুষের বিশালত্বের কাছে ট্রফিটিকে আর বিশাল মনে হয়নি।
সামনের দিকে তাকিয়ে হাসা প্রাণগুলো আর্জেন্টাইন ফুটবলার। ট্রফিটা কোপা আমেরিকা। যার দিকে সবাই তাকিয়ে, তিনি লিওনেল মেসি। আজ থেকে ঠিক দু’বছর আগে, ১১ জুলাই ২০২১ সালে ব্রাজিলের মারাকানায় মেসির আর্জেন্টিনা প্রথম শিরোপা জিতেছিল। যে শিরোপায় খুলেছে অন্ধকারের বন্ধ দুয়ার, এরপর এসেছে বিশ্বকাপের সোনালি জোয়ার।
উরুগুয়ের সঙ্গে কোপা আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ১৫ শিরোপা জয়ের মালিক এই আর্জেন্টিনাই। তবু, আগের ১৪টির চেয়ে শেষটার মাহাত্ম্য অনেক। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকার আগে মেসি জাতীয় দলের হয়ে আরও তিনটি কোপার ফাইনাল খেলেছিলেন, শেষ হাসি হাসতে পারেননি। অভিশাপ কাটানোর জন্য হলেও একটা শিরোপা দরকার ছিল তার। সঙ্গে ছিল ২৮ বছর ধরে বড় কোনো শিরোপা না জেতার দুঃখকে সঙ্গী করে দলটাকে ভালোবেসে যাওয়া আর্জেন্টিনার সমর্থকরা।
মেসি তো সবই পেয়েছিলেন, তবু চেয়েছিলেন দেশের হয়ে একটি শিরোপা। এই এক কোপা আমেরিকা মেসিকে শুধু শিরোপাই দেয়নি। আর্জেন্টিনাকে একজন গুরু দিয়েছে। যিনি কাদামাটির মতো গড়েছেন এক নেতাকে। সেই নেতা গুরুদক্ষিণা হিসেবে এমন একটা দল তৈরি করেছেন, যারা যুদ্ধের ময়দানে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়তে প্রস্তুত ছিলেন।
লিওনেল স্কালোনি, লিওনেল মেসি ও একদল অদম্য তারকা মিলে বেদনার নীল রঙে আনন্দের আলপনা এঁকেছেন। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকার ঠিক মাঝখানে সূর্য চেয়ে আছে। কোপার রূপালি পাতের হাত ধরে লা ফিনালিসিমা, তারপর বিশ্বকাপের সোনালি গোলক। বিধাতার কী চমৎকার চিত্রনাট্য!
২০২১ সালের ১১ জুলাই মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলের বিপক্ষে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার গোলটি কেবলই এক গোল নয়। এক অবিস্মরণীয় মহাযাত্রার শুভারম্ভ বলা যেতে পারে। মারাকানা হয়ে লুসাইল, কোপা হয়ে বিশ্বকাপ। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব থেকে বিশ্বসেরা। জাদুকর মেসি ও তার জাদুর কাঠি কোপার শিরোপা, দুই বছরে পাল্টে দিল সব!