বাবার শূন্যতায় হাহাকার তুবা-রঈদের মন
আহিয়ান বারী রঈদ। বয়স সবে নয় বছর। রাজধানীর একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। তিন বছর ধরে রঈদের বাবা নেই। তার বয়স যখন ছয়, তখনই বাবাকে হারায়। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত রাজপথের এক সময়কার মাঠ কাঁপানো নেতা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মরহুম শফিউল বারী বাবুর একমাত্র ছেলে সে। রঈদের বোন নুযহাত ফাতিমা বারী তুবা। বয়স ১২ বছর। রাজধানীর একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তাদের বাবার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল শুক্রবার (২৮ জুলাই)। বাবার শূন্যতায় হাহাকার রঈদ-তুবার মন।
বাবাকে নিয়ে রঈদ ও তুবার স্মৃতির শেষ নেই। এতটুকু বয়সে বাবাকে হারিয়ে অনেকটা নির্বাক দুই ভাইবোন। বাবার কথা মনে করে ছোট দুই শিশুর পানিতে চোখ ভিজে যায়।
বাবার স্মৃতিচারণ করে রঈদ বলে, ‘সব বন্ধুরা তাদের বাবার হাত ধরে মসজিদে যায়। আমি আমার বাবাকে খুঁজে পাই না কোথাও। বাবাকে ভীষণ মিস করি।’
নুযহাত ফাতিমা বারী তুবা বলে, ‘স্কুলে সব ফ্রেন্ডের বাবা আছে, কিন্তু আমার বাবা নেই। বাবা আগে সব শখের জিনিস বিনা কন্ডিশনে মেনে নিত। মা অনেক হিসেব নিকেশ করে, আগেও করত এখন আরও বেশি করে। তারপরেও মা কে ভালোবাসি। বাবার শুন্যতা অপূরণীয়। বাবাকে ভীষণ মিস করি। যখন মায়ের বকুনি খাই, তখন বেশি মিস করি। কারণ, মায়ের বকুনি খেয়ে আগে বাবার কোলে বসে থাকতাম।’
শফিউল বারী বাবু মাত্র ৫১ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান। নেতাকমীরা মনে করেন, আদর্শের রাজনীতিতে আপসহীন, অত্যন্ত সাহসী এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানের অধিকারী এই নেতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। তিনি ছিলেন সেরা সংগঠকদের অন্যতম। ছাত্ররাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে সাংগঠনিক নেতৃত্বের বিচক্ষণতা, দৃঢ়তা ও আপসহীনতা তাকে রাজনৈতিক প্যারামিটারের এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল।
বাবুর স্মৃতিচারণ করে তার স্ত্রী বীথিকা বিনতে হুসাইন বলেন, ‘সময় এবং বাস্তবতা অনেক কঠিন মনে হচ্ছে। পৃথিবীতে কৃতজ্ঞ মানুষের সংখ্যা অনেক কম। অনেক কাছের মানুষকে বদলে যেতে দেখেছি। অনেক দূরের মানুষকে খুবই মানবিক এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাছে পেয়েছি, তবে সেটা দু’একজন। সুসময় এবং অসময়গুলো জীবনের কেমন কাটে জেনেছি। এ পর্যন্ত সংগ্রামের সঙ্গেই যাচ্ছে…যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকার জন্য এ সংগ্রাম। জীবন পুষ্প শয্যা নয়, সেটা অনুধাবন করছি।’ তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে ভীষণ অনুভব করি, স্বাধীনতার পূর্ব থেকে আজ অবধি তিনি সংগ্রাম করেই যাচ্ছেন। আমার জীবনের এই সংকটময় সময়ে দেশনেত্রী আমার অনুপ্রেরণা, আমার সাহস, আমার আদর্শ।’
বীথিকা বিনতে হুসাইন আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন আমি নির্যাতিত অসহায় মানুষদের ফিল করি। তাই তাদের পাশে সব সময় থাকতে চাই। তাদের জন্য কাজ করে যেতে চাই।’
বীথিকা জানান, বিএনপির জন্য আজীবন সংগ্রাম করা বাবু সব সময় দল এবং সংগঠনের কথা চিন্তা করতেন। নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এবং বিলাসী জীবনকে কখনো প্রাধান্য দিতেন না। সংগঠন এবং দলের স্বার্থে তিনি যোগ্যদের অগ্রাধিকার দিতেন। দেশ ও জনগণের চিন্তা তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত করেছেন। তার সততা, ত্যাগ এবং আদর্শের জন্য আজও তিনি বিএনপি, আওয়ামী লীগ, হিন্দু, মুসলিম সবার হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন।