তিন বছরে হয়নি, এক মাসে সম্ভব!
২০১৩ সালেই দেশের অটোমেটেড টেলার মেশিনের (এটিএম) বুথে নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে তখন যদি ওই নির্দেশনা মানা হতো তবে জালিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল।
তিন বছর পর এটিএম বুথে জালিয়াতির ঘটনা ঘটার পর ব্যাংকগুলোকে আবারও একই নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে এক মাসের মধ্যে এটিএম বুথে নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই হিসেবে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে নিজেদের বুথে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। একই সঙ্গে এটিএম বুথ পরীক্ষা করে প্রতিমাসে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বুথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ নিয়ে সময়সীমা বাড়ানোর কোনো চিন্তাভাবনা নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। বরং বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে এক মাসের মধ্যেই বুথগুলোতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেশে এটিএম বুথের সংখ্যা সাত হাজার।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের জন্য নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় বলা হয়, নতুনভাবে স্থাপিত এটিএম বুথে বাধ্যতামূলক ‘এন্টি স্কিমিং ও পিন শিল্ড ডিভাইস’ স্থাপন করতে হবে। আর যেসব এটিএম বুথে এসব যন্ত্র নেই, সেসব বুথে তা লাগানোর জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয়।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়, প্রতিদিন এটিএম বুথে সংগঠিত লেনদেনের ফুটেজ যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং তাতে কোনো সন্দেহজনক বিষয় দেখা গেলে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া এটিএম বুথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার প্রতিবেদন প্রতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর কথা বলা হয় ওই নির্দেশনায়।
নির্দেশনায় বলা হয়, ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জারি করা নির্দেশনা (পিএসডি সার্কুলার নং-০৩/২০১৩) যথাযথভাবে পরিপালন, এটিএম বুথে স্থাপিত সিসিটিভির ফুটেজ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং এন্টি স্কিমিং ডিভাইস স্থাপন করা হলে এ ধরনের জালিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল মর্মে প্রতীয়মান হয়।
বাংলাদেশের ব্যাংকের ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ওই সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ১৫ মার্চ। তবে সাতহাজার বুথে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে ডিভাইসগুলো লাগবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঠিক এক মাসের মধ্যেই সাত হাজার বুথে নিরাপত্তা রক্ষায় ওই প্রযুক্তি স্থাপিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। এখানে ব্যাংকগুলোকেও যথাযথভাবে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এখানে ব্যয় করা উচিত বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।
কিন্তু এক এক ব্যাংকের একেক ধরনের নিয়ম, কেনাকাটার ধরন, দরপত্র দেওয়ার ধরন, কাজের গতি সব মিলিয়ে ঠিক আগামী ১৫ মার্চের মধ্যেই লক্ষ্য শতভাগ পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ করছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বুথে প্রযুক্তি ব্যবহার করে শতভাগ নিরাপত্তা কোনো কোনো ব্যাংকের তিন মাসও লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
তবে নির্ধারিত সময় বাড়াতে চায় না বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এক মাসের সময় আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি।
ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেই সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে করাটা অসম্ভব কিছু না।’ শুভঙ্কর সাহা আরো বলেন, ‘যত সময় পেছানো হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও পিছিয়ে পড়বে।’ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বুথের যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।