মণিপুরে নতুন করে সহিংসতায় একদিনে ছয়জন নিহত
ভারতের জাতিগত সংঘর্ষে বিধ্বস্ত মণিপুরে নতুন করে সহিংসতায় গত ২৪ ঘণ্টায় বাবা-ছেলেসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। শনিবার (৫ আগস্ট) সকাল থেকে বিষ্ণুপুর-চুরাচাঁদপুর সীমান্ত এলাকায় দিনব্যাপী পাল্টাপাল্টি হামলায় প্রায় ১৬ জন আহত হয়েছে। খবর এনডিটিভির।
সেনাবাহিনী ওই এলাকায় বড় ধরনের চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। তারা একজন বিক্ষোভকারীকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হওয়ায় আজ ইম্ফলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে কারফিউ শিথিল করা হবে না।
শনিবার (৫ আগস্ট) ছিল মণিপুরে এক পাক্ষিকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক দিন, বিষ্ণুপুর-চুরাচাঁদপুর সীমান্তের বেশ কয়েকটি জায়গায় দিনব্যাপী উভয় পক্ষের মধ্যে মর্টার ও গ্রেনেড হামলা এবং গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বিষ্ণুপুর জেলার কোয়াকতা এলাকায় একটি গ্রামে ভোরের দিকের হামলায় বাবা-ছেলেসহ তিন নিরস্ত্র গ্রামবাসী নিহত হয়। ভুক্তভোগীরা আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছিলেন, কিন্তু শুক্রবার তারা নিজেদের গ্রাম পাহারা দেওয়ার জন্য ফিরে এসেছিলেন। গত ৩ মে প্রথমবার সহিংসতা শুরুর পর গ্রামবাসীরা ক্যাম্পে পালিয়ে যায়।
নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানায়, দুজনকে খুব কাছ থেকে গুলি করার আগে তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিশোধ নিতে আক্রমণ শুরু হয়। সশস্ত্র লোকেরা গুলি চালায় এবং কোয়াকতার দুটি প্রতিবেশী গ্রাম ফুজাং ও সোংদোতে মর্টারশেল ও গ্রেনেড ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। গ্রাম দুটি চুরাচাঁদপুর জেলার অন্তর্গত। এ হামলায় দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।
বিষ্ণুপুর জেলার তেরখাংসাংবিতে একযোগে হামলায় একজন নিহত এবং একজন পুলিশ কমান্ডোসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
ইম্ফলের পূর্বাঞ্চলীয় জেলার সানসাবি ও থামনাপোকপি গ্রামে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা গুলি করার খবরও পাওয়া গেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। এছাড়া ইম্ফলের পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলার ল্যাংগোলে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে অজ্ঞাত হামলাকারীরা। ইম্ফলেও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের জামাতা ও বিজেপি বিধায়ক রাজকুমার ইমো সিং শনিবার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সমালোচনা করেছেন। বিষ্ণুপুর জেলায় হামলার ঘটনায় বিশাল নিরাপত্তা ত্রুটি ছিল বলে দাবি করেন তিনি। ‘দায়িত্ব অবহেলার’ জন্য আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
এদিকে, মণিপুর পুলিশ শুক্রবার জানায়, যৌথ বাহিনী সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত রাজ্যের ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক এলাকায় অনুসন্ধান অভিযান পরিচালনা করেছে এবং বিভিন্ন জেলাজুড়ে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পরে সাতটি অবৈধ বাঙ্কার ধ্বংস করেছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষে ছড়িয়ে পড়েছে। মেইতেইদের তালিকাভুক্ত উপজাতির (এসটি) মর্যাদা দাবির পরে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। সহিংসতা এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং শতাধিক প্রাণহানি হয়েছে।