নিটোরের পরিচালক হলেন অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম উজ্জামান
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটোর) এর নতুন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম উজ্জামান।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ৭ আগস্ট (সোমবার) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের পারসোনেল-১ শাখার উপসচিব সারমিন সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ডা. কাজী শামীম উজ্জামান এর আগে একই প্রতিষ্ঠানের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম উজ্জামানের জন্ম ১৯৬৬ সালের ৩ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার পূর্ণবতী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তাঁর বাবা মরহুম কাজী হেমায়েত উদ্দিন ও মা কাজী মনোয়ারা বেগম। বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী এই চিকিৎসক ১৯৮১ সালে কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি, ১৯৮৩ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৯০ সালে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর অধীনে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) থেকে অর্থোপেডিক সার্জারির সর্বোচ্চ ডিগ্রি এমএস লাভ করেন।
অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম ১৩তম বিসিএস এর মাধ্যমে ২৫ এপ্রিল ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থোপেডিক সার্জারির বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তিনি। আমেরিকান কলেজ অব সার্জনস থেকে ফেলোশিপ পাওয়া স্বনামধন্য এই চিকিৎসকের ১২টি গবেষণাধর্মী আর্টিকেল বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। পারিবারিক জীবনে তিন সন্তানের বাবা অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম এর সহধর্মিণী দিলরুবা মাজেদা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর।
দক্ষ এই ট্রমা সার্জনের কর্মজীবন শুরু বারডেম হাসপাতালে। পরে সরকারি চাকরিতে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ভোলাহাট এবং ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চার বছর দেশের প্রান্তিক মানুষদেরকে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে সেবা দিয়েছেন। পরবর্তীতে নিটোরে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে যোগদান এবং এখান থেকেই অর্থোপেডিক সার্জারিতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। মাঝে কিছুদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে কাজ করেছেন। সহকারী অধ্যাপক ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদের দায়িত্বে ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশনে (নিটোর)।
ডা. কাজী শামীম একজন আন্তর্জাতিক মানের দেশের প্রথমসারির হিপ ও পেলভিস-অ্যাসিটাবুলাম সার্জন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক। দেশের জনগণের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ১০০০ (এক হাজার) শয্যা বিশিষ্ট জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করছেন। রোগীবান্ধব মানবিক এই চিকিৎসককে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
ডা. কাজী শামীম উজ্জামান বলেন, “আমার দশ ভাইবোনের মধ্যে আমি পঞ্চম। আমার প্রয়াত বাবা ছিলেন ধার্মিক ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন ন্যায়পরায়ণ সমাজকর্মী। আমার দৃষ্টিতে বাবা ছিলেন মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন দার্শনিক। বাবার নির্দেশিত পথ ধরে আমার আজকের অবস্থান। আর আমার মা একজন সার্বজনীন সাদা মনের অনবদ্য নারী, যাঁর আদর স্নেহের বর্ণালী পরশে আমার পৃথিবী আজ এত রঙিন।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডা. কাজী শামীম উজ্জামান বলেন, “জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের পরিচালকের দায়িত্ব অর্পণ করায় আমি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। একজন অর্থোপেডিক সার্জন হিসেবে আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানকে ধারণ করি। সবার সহযোগিতায় এ দেশের আপামর জনগণের উন্নত অর্থোপেডিক চিকিৎসা সেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই।”