ত্বকী হত্যার তিন বছর, বিচারে অনীহার অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার তিন বছর পূর্ণ হলো আজ রোববার। তবে এখনো বিচার হয়নি এই হত্যাকাণ্ডের। এক বছরের মাথায় অভিযোগপত্রের খসড়া প্রকাশ করলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সংস্থাটির দাবি, তদন্ত চলমান।
তিন বছর পরও তদন্ত চলমান থাকা এবং হত্যার বিচার না হওয়াকে সরকারের ব্যর্থতা বলে মনে করেন বিশিষ্টজন। সরকারের কারণেই প্রতিষ্ঠান এবং আইন ঠিকমতো চলছে না বলেও মত তাঁদের। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস রেখেই বলছেন, ত্বকী হত্যার বিচার একদিন হবেই।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সমস্যাটা তৈরি হয়েছে যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সে অভিযোগ সন্ধানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে, কিছু কিছু তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু বিচারে বাধা পাওয়া যাচ্ছে, কারণ খুনিদের রক্ষা করতে উচ্চ মহল থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। আইন এখানে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।’
বাংলাদেশের জনগণ কিছু মাফিয়ার হাতে জিম্মি হয়ে আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান। তিনি বলেন, ‘এই গডফাদাররা বাংলাদেশে সন্ত্রাস, কালো টাকা, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এরাই আসলে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করেছ। এদের অনেকেই সরকারি দলের সরকারি প্রশ্রয়ে চলে। তাই এদের কোনো বিচার হয় না। নারায়ণগঞ্জের ত্বকী হত্যাকাণ্ডও সেই একই ঘটনা। তবে যেভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচার যেমন বন্ধ করা যায়নি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা যায়নি, তেমনি ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচারও বন্ধ করা যাবে না।’
এদিকে সন্তানহারা বাবা রফিউর রাব্বী মনে করছেন, ত্বকী হত্যা বিচারে সরকারের অনীহা রয়েছে। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করছে না। ত্বকীর হত্যাকারীরা ছাড় পাবে না, প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের দৃষ্টান্ত দেখতে চান তিনি। আর দ্রুত অভিযোগপত্র দাবি করেন তিনি।
রফিউর রাব্বী আরো বলেন, সরকার চাইছে না বলেই ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না। এটার তদন্তকাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আছে। এটা সরকারের ইচ্ছাতেই হয়েছে। এক বছরের মধ্যেই তদন্তকারী সংস্থা সব তদন্ত শেষ করে গণমাধ্যমে জানিয়েছিল যে কীভাবে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে ত্বকীকে ১১ জন মিলে হত্যা করেছিল। কিন্তু এরপর দুই বছর পার হয়ে গেলেও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। এটা তো আর বুঝতে বাকি থাকে না যে সরকারের এই বিষয় নিয়ে প্রচণ্ড অনীহা। যেই আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই তিনিই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড অনীহা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে এত কিছুর পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী ত্বকীসহ সব শিশু হত্যাকাণ্ডের বিচার করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন রাব্বী।
তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, ‘ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত করছে র্যাব। তবে তদন্ত এখনো চলমান। এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ঘটনা। গুরুত্বসহকারে মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিশ্লেষণ করছি। এর আগে খসড়া অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল। সেটার খুঁটিনাটি বিষয় এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কবে শেষ হবে, তা আগে থেকে বলা যায় না। তবে শেষ হলে বিস্তারিত সবাইকে সব জানানো হবে। তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাবে না।’
২০১৩ সালের ৪ মার্চ নিখোঁজের দুদিন পর ৬ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ত্বকীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।