ড. ইউনূসের বিচার স্থগিতে প্রধানমন্ত্রীকে ১৬০ বিশ্বনেতার খোলা চিঠি
নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলা বিচার বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন ১৬০ বিশ্বনেতা। এদের মধ্যে নোবেল বিজয়ীরাও রয়েছেন। তারা ওই চিঠিতে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য বলেছেন। পাশাপাশি আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল বলেও চিঠিতে জানান বিশ্বনেতারা।
আজ সোমবার (২৮ আগস্ট) রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস এক বিজ্ঞপ্তিতে চিঠিটি প্রকাশ করেছেন। চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা প্রেসিডেন্ট, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের মতো ব্যক্তিত্ব স্বাক্ষর করেছেন।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতার পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে আমরা তার প্রশংসা করি। কিন্তু, সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখেছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনে প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো—নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন, সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস।
আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন। তারপর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা রাখার সুযোগসহ আপনার দেশের মধ্য থেকে নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল দ্বারা অভিযোগের পর্যালোচনা করা হবে। আমরা নিশ্চিত, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী এবং শ্রম আইনের মামলাগুলোর যেকোনো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার করলে তিনি খালাস পাবেন।
আপনি জানেন, কীভাবে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ আন্তর্জাতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হতে পারে। এ নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের কাজ আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণামূলক। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন তিনি তার একটি প্রধান উদাহরণ। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি, তিনি যেন নিপীড়ন বা হয়রানি মুক্ত হয়ে তার উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
আমরা আশা করি, আপনি এই আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান একটি সমীচীন, নিরপেক্ষ এবং ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতিতে নিশ্চিত করবেন। এর পাশাপাশি আসছে দিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান (প্রদর্শন) নিশ্চিত করবেন। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে এই বিষয়গুলোর সমাধান করা হয় তা ঘনিষ্ঠভাবে নজরে রাখার জন্য আমরা বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের শিবিরে যোগ দেব।