প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর বিএনপির
নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র । ১৯৭৮ সালের এইদিনে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে দলটির যাত্রা শুরু হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০শে মে নিহত হন। এরপর সময়ের পরিক্রমায় দলের হাল ধরেন জিয়াউর রহমান পত্নী বেগম খালেদা জিয়া। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে তিনবার ক্ষমতায় আসে দলটি। তিনবারই প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেন আদালত। পরে ২০১৮ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তারেক রহমান।
প্রতিষ্ঠার পর উন্নয়ন-উৎপাদনের আধুনিক রাজনীতিকে মূলপ্রতিপাদ্য করে ১৯ দফা কর্মসূচির আলোকে যাত্রা শুরু করে দলটি। প্রায় ১৭ বছর ধরে দলটি ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এক দফা আন্দোলন করছে দলটি। প্রতিষ্ঠার পর নানা সঙ্কট মোকাবিলা করে দেশে অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক তকমা পেয়েছে বিএনপি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে ভোর ৬টায় দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে, সকাল সাড়ে ১০টায় প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ দলটির অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন এবং বিকাল ৩টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হবে। র্যালিটি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে ফকিরাপুল মোড়, নটরডেম কলেজ, শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড় হয়ে রাজধানী মার্কেটে গিয়ে শেষ হবে।
এদিকে ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তানস্থ মহানগর নাট্যমঞ্চে আলোচনা সভা করে দলটি। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশের ইউনিটগুলো পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া এক বার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ থেকে ৪৫ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিশ্ববরেণ্য রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের যাঁতাকল থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। এই শুভদিনে আমি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশের জনগণকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক চেতনায় গণমানুষের দল। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার বিএনপি’র সকল নেতাকর্মী অন্তরে ধারণ করে। বিএনপি’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহান দিনে আমি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দলকে আরও গতিশীল করার ক্ষেত্রে মনেপ্রাণে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। দেশ আজ দুঃশাসন কবলিত। গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্যসঙ্গী। আইন, বিচার, প্রশাসন সবকিছুই সরকারি কব্জার মধ্যে। বিরোধী দলকে দমন করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। খুন-খারাবি, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমানহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা থাকতে পারে না।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। ‘গণতন্ত্রের মা’ এবং জনগণের নাগরিক ও বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষের প্রধান কণ্ঠস্বর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সকলকে একযোগে রাজপথে নামতে হবে। পাশাপাশি দেশের বর্তমান ক্রান্তিকাল অতিক্রমের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অনন্য কীর্তির মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তিনি এমন আদর্শিক ভাবে তৈরি করেছেন যে মানুষের হৃদয়ে গেঁথে গেছে। মানুষ তার হৃদয়ের স্থান দিয়েছে এ দলটিকে । এই দলকে মানুষ ভালোবাসে বলেই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে ভয় পায়। তিনি বলেন, নির্বাচন এবং ক্ষমতায় যাওয়াই বড় কথা নয়। দেশের মানুষকে কতৃর্ত্ববাদী শাসন থেকে মুক্ত করাই হচ্ছে মুল চ্যালেঞ্জ। গত ১০/১৫ বছর ধরে আওয়ামী শাসন,ধারাবাহিকতায় লুটপাট, গুম, হত্যাকান্ড থেকে জনগণকে রক্ষা করাই বিএনপির দায়িত্ব। বিএনপি জনমুখী দল হিসেবে এটাই অঙ্গীকার। তিনি বলেন, আগামী ২/৩ মাস খুব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতিতে নিয়ে যাওয়াই এখন লক্ষ্য এবং জনগণের আন্দোলনের মুখে সরকার নিরপেক্ষ সরকার দিতে বাধ্য হবে।