দুই ভুবনের তিন বাসিন্দা
মাত্র ১৮ দিনের মাথায় দুই যমজ শিশু ও তাদের মানসিক প্রতিবন্ধী মা দুই ভুবনের তিন বাসিন্দা। তারা আর কোনো দিন এক ছাদের নিচে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে কি না, তা কেউ জানে না।
গত ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের নতুন গ্রামের জামিরুল ইসলামের বাড়ির একটি খড়ের ঘরে ভারসাম্যহীন এক নারী যমজ সন্তান প্রসব করেন। বাড়ির মালিক জামিরুল ওই নারী ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে ওই দিনই সন্ধ্যায় তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সমাজসেবা কার্যালয়, আনসার, বিভিন্ন এনজিও সার্বিক দেখভাল করে তাদের।
অজ্ঞাতপরিচয় ওই ভারসাম্যহীন নারীর নাম, ঠিকানা উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর মোসাম্মত মাহিনুর বেগম (৩০) এবং বাড়ি খুলনার তেরখানা উপজেলায়। হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি যশোর পিবিআই তাঁর মা ও ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু তাঁরা মাহিনুর ও তাঁর সন্তানদের নিতে রাজি হননি।
১৮ দিন চিকিৎসার পর আদালতের নির্দেশনায় জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) মাহিনুরকে পাঠানো হয় গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে। তাঁর দুই যমজ সন্তান মোহাম্মদ মুসা ও মোসাম্মত মাইশাকে পাঠানো হয়েছে খুলনায় সরকারি ছোটমনি নিবাসে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘১৮ দিন আগে মাহিনুর ও তার দুই সন্তানকে যখন হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তখন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমরা সব রকমের চিকিৎসা দিয়ে তাদের সুস্থ করে তুলি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, রাষ্ট্র যত দিন মানসিক ভারসাম্যহীন এই মা ও তাঁর সন্তানদের দায়িত্ব না নেবে, তত দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের দেখাশোনা করবে। রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানিয়েছি।’
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও তাঁর দুই সন্তানের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে। তাদের দুটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতাল থেকে পৃথক দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন মা ও যমজ সন্তানদের পৃথক দুটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন সেখানে যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়ও উপস্থিত ছিলেন। একটি অ্যাম্বুলেন্সে মাহিনুরকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হন জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিন, আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে যমজ দুই শিশুকে নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা হন সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড প্রটেকশন কর্মকর্তা খালেদা আক্তার।
কখনও কি সুস্থ হবেন মাহিনুর? সুস্থ হলেও সন্তানদের কি চিনতে পারবেন তিনি? কখনও কি তাদের জীবনে ঘটবে সিনেম্যাটিক মিলন? হাসপাতালে বিদায় জানাতে আসা অনেকের মনেই এমন সব প্রশ্ন।