প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারই যথেষ্ট নয়, সতর্ক করলেন ইউএনইপি প্রধান
বিশ্বজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে প্লাস্টিকের উৎপাদন। এতে করে বাড়ছে দূষণও। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করেই মানুষ এই সংকট থেকে বের হতে পারবে না।’ তাই প্লাস্টিক ব্যবহারের পদ্ধতি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তিনি। খবর এএফপির।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশেন চলছে। সেই অধিবেশনের ফাঁকে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) নির্বাহী পরিচালক মিসেস ইঙ্গার অ্যান্ডারসন বলেন, ‘আমাদের এই সংকট দূর করতে ভিন্ন পরিকল্পনা নিতে হবে। আমার ধারণা, পুনর্ব্যবহার কোনো বিকল্প নয়।’
ভবিষ্যতে প্লাস্টিক দূষণ রোধে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, এ সংক্রান্ত একটি খসড়া দুই সপ্তাহ আগে প্রকাশ করেছিলেন অ্যান্ডারসন। এরপরেই জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির প্রধান এ মন্তব্য করলেন। প্রস্তাবিত ওই খসড়া ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্লাস্টিক দূষণ রোধে বর্তমানে ১৭৫টি দেশ একযোগে কাজ করছে। এসব দেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিপরীতে উৎপাদনকারীরা পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে। অ্যান্ডারসন বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধ করা এবং তা নির্মূল করা। প্লাস্টিক দিয়ে পণ্য মোড়ানো সম্পূর্ণ বন্ধ করা।’
প্লাস্টিক উৎপাদনের কাঁচামাল সরবরাহ কমাতে হবে জানিয়ে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির প্রধান বলেন, ‘প্রস্তাবিত খসড়ায় এর বিকল্প রয়েছে।’
এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইঙ্গার অ্যান্ডারসন বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই, আমাদের যতটা সম্ভব পুনর্ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু, এখন আমরা যা দেখছি–প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। এতে স্পষ্ট হচ্ছে, আমরা এই সংকট থেকে বের হতে পারছি না।’
সর্বশেষ ২০ বছরে প্লাস্টিকের বার্ষিক উৎপাদন দ্বিগুণ হয়ে ৪৬ কোটি টনে পৌঁছেছে। আর ২০৬০ সাল নাগাদ উৎপাদন তিনগুণ হতে পারে। বর্তমানে উৎপাদনের মাত্র নয় শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়। সমুদ্রের প্রতিটি স্তরে প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি, সর্বোচ্চ পাহাড়ে থাকা পাখির পাকস্থলি, মানুষের রক্ত, মাতৃদুগ্ধ ও পয়োঃবর্জ্যেও প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে।
অ্যান্ডারসন বলেন, ‘আমরা যদি প্লাস্টিকের কাঁচামালে প্রভাব আনতে না পারি, তাহলে সমুদ্রে প্লাস্টিকের প্রবাহ বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। সামুদ্রিক পরিবেশ মানুষের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্লাস্টিক দূষণ রোধের আন্তর্জাতিক চুক্তিটি সাগর রক্ষায় ব্যাপকভাবে কাজে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭০টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে তা হবে ঐতিহাসিক।