ড. আকবর আলি খান নির্দ্বিধায় সত্য কথা বলতেন : স্মরণসভায় বিশিষ্টজনেরা
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান নির্দ্বিধায় সত্য কথা বলতে পারতেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কোনো কিছু দেখার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল আকবর আলি খানের। ইতিহাস ও অর্থনীতির ছাত্র বিধায় তিনি তার লেখায় এই দুই বিষয়ে সুন্দর সমন্বয় করেছেন। তিনি তার লেখায় সমাজ ও অর্থনীতি নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেছেন। আমাদের দেশে সত্য বলার একটা সংকট রয়েছে। সবাই ভয়ে সত্য কথা বলতে চায় না। এক্ষেত্রে তিনি অনন্য। তিনি নির্দ্বিধায় সত্য কথা বলতে পারতেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা এসব কথা বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের রসুল্লাবাদ উলফত আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা এর আয়োজন করেন।
বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম জসীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান, ইউনাইটেড নেশন ইনফরমেশন সেন্টারের সাবেক প্রধান কাজী আলী রেজা, ড. আকবর আলী খানের মেজ ভাই জিয়া উদ্দিন খান, ডেমরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইউনুস মোল্লা, অ্যাডভোকেট একেএম সালাউদ্দিন, সরকারি বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহীন, মহাখালী টিএন্ডটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. নূর-এ-আলম সিদ্দিকী প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি হাসান জাবেদ।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, অর্থনীতির উপর এবং ইতিহাসের ওপর ড. আকবর আলি খানের লেখনিগুলো অকাট্য দলিল। তিনি একজন ইতিহাসের ছাত্র। কিন্তু একইসঙ্গে অর্থনীতিতেও ডিগ্রি নিয়েছেন। দুটো বিষয়েই সমানভাবে লিখেছেন। তিনি সরকারি আমলা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অধ্যাপনা করেছেন। তবে তার অধ্যাপনার জীবনের দিকটিও কিন্তু অনেকটা অনালোচিত। জীবনে তিনি একবারই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তবে সেটি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। তার এই কাজ একইসঙ্গে গৌরবের এবং সম্মানের। কেননা তিনি টাকা-পয়সা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সরবরাহ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন অস্ত্র সরবরাহও করবেন। কিন্তু এ বিষয়ে তৎকালীন পুলিশের যারা দায়িত্বশীল ছিলেন, তারা একমত হননি।
ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ড. আকবর আলি খান ছিলেন আপসহীন। এটি বোঝা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। ইস্তফা দিয়ে যে নোট তিনি লিখেছিলেন তা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি লিখলেন, ‘যেখানে অবদান রাখার সুযোগ নেই, যেখানে কাজ করার সুযোগ নেই- সেখানে থাকার কোন অর্থ হয় না। অনেক মানুষ আছেন, যাদের চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং নৈতিক মূল্যবোধ শক্তিশালী নয়। এক্ষেত্রে আকবর আলি খান অনন্য।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। আলোচনা শেষে আকবর আলি খানের রূহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া পরিচালনা করা হয়।