ঢাবির নতুন উপাচার্য মাকসুদ কামালের দায়িত্ব গ্রহণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২৯তম উপাচার্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় ও পরামর্শক্রমে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
আজ শনিবার (৪ নভেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ে তিনি এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), কোষাধ্যক্ষ, ডিনবৃন্দ, প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টর, শিক্ষকবৃন্দ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অধ্যাপক মাকসুদ কামালকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তিনি ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাকে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেছেন। তাদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। গত বুধবার আমাকে তিনি ডেকেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে কিভাবে কাজ করতে হবে সে ব্যাপারে তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় হলো আমার বিশ্ববিদ্যালয়। আমি চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যেন বিশ্বশিক্ষা মানচিত্রে ভিন্ন উচ্চতায় থাকে। সেজন্য যে সহযোগিতা দরকার সবধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। তার দৃষ্টি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি, যেন এই বিশ্ববিদ্যালয় মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে। এজন্য তিনি আমাদের সকলকে দলগতভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।’
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং শিক্ষাসহ বিভিন্ন দায়িত্বেই ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সকলের পরামর্শক্রমে যেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করি সেই পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিয়েছেন। আমি যতদিন আপনাদের সাথে থাকি ততদিন আমার অভিজ্ঞতার আলোকে আপনাদের সাথে দলগতভাবে কাজ করব।’
উপাচার্য মাকসুদ কামাল আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশ এবং মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এদেশ বা এ অঞ্চলের মানুষ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজনীতি থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান রয়েছে। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে জাতি গঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে অনেক বিষয়কে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পেরেছি, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্যাপও রয়েছে। সেই জায়গাগুলোতে আমরা সকলেই মিলেমিশে কাজ করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ প্রসঙ্গে ঢাবি উপাচার্য মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমরা সৃজনশীল কাজ করার চেষ্টা করব। আমরা দেখেছি, এশিয়া মহাদেশে ইনোভেশনের ক্ষেত্রে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পেছনে রয়েছে। আপনারা জানেন যে, টাইমস হায়ার এডুকেশন তাদের মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে। তাদের এই মূল্যায়নের ক্ষেত্রে রিসার্চ এনভায়রনমেন্ট এবং রিসার্চ কোয়ালিটির উপর ৬০ মার্ক। অনেক গবেষণার কাজ হয় কিন্তু সেটা মানসম্মত হয় না। সুতরাং গবেষণার সংখ্যার চেয়ে গবেষণার মান কেমন এবং সমাজে সেটির ইম্প্যাক্ট কি, সেটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশের সর্বোচ্চ এবং সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এখানে আমরা যারা দায়িত্বে আছি আমাদের সকলকে নিয়েই এই বিশ্ববিদ্যালয়। কেউ যদি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তার কাছে নীতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপারগুলো আসে। কিন্তু, মূল বিষয়টি হলো এই নলেজগুলো তৈরি করা। সামনের দিনগুলোতে আমাদের অনেক কাজ করার আছে।’
নতুন উপাচার্য আরও বলেন, ‘মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে আমরা ইতোমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশেষ জায়গায় নিয়ে এসেছি। এর আগে, আমি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে তার সাথে কাজ করেছি। আমি উনার প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এজন্য যে, যেখানে প্রয়োজন ছিল সেখানেই তিনি সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইমপ্লিমেন্টেশন প্রক্রিয়াটা বাধা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যেমন- "টিচিং ইভালুয়েশন"। এটার সুন্দর একটি ডকুমেন্টেশন আমরা করেছি। কিন্তু এর বাস্তবায়ন এখনও আমরা করতে পারিনি এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যকার যে ইন্টারেকশন বা বন্ডিং সেটা জোরদার হবে। যখন শিক্ষার্থীরা একজন শিক্ষককে মূল্যায়ন করবেন তখন তিনি সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করবেন এবং তিনি মনে করবেন যে, তার মধ্যে কোন মিসিং না থাকে। এই জিনিসটা আমরা বাস্তবায়ন করব। এর বাইরে উন্নত দেশগুলোর মতো ফান্ডেড স্কলারশিপ প্রোগ্রামের কাজ করব। সেটির একটি নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। এরকম অনেক কাজ আমাদের হাতে রয়েছে।’
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তার সর্বশেষ অফিস সম্পন্ন করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ অক্টোবর অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ২৯তম উপাচার্য পদে সাময়িকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে রাষ্ট্রপতির আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় অধিশাখা-২ এর যুগ্ম-সচিব মো. মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।