বিএনপি গাজাবাসীর মতো নিরীহ, রাষ্ট্র ইসরায়েলির মতো নিপীড়ন চালাচ্ছে : কায়সার কামাল
বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, রাষ্ট্র সরাসরি তাঁর নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে; সারা দেশের বিএনপির লোকজন মনে হয় গাজা উপত্যকার নিরীহ বাসিন্দা ও জনগণ। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী যেভাবে ফিলিস্তিনি নিরীহ জনগণের ওপর অত্যাচার হামলা করছে ঠিক তেমনিভাবে বিএনপির নেতাকর্মী ও সরকার বিরোধীদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আইনজীবীসহ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ বুধবার (২৯ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে কায়সার কামাল বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দলসমূহ শাস্তিপূর্ণভাবে ও নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক ধারায় আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এ লক্ষ্যে নির্বাচনের পূর্বে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের সুনির্দিষ্ট এক দফার ভিত্তিতে বিরোধী দলসমূহ টানা আন্দোলনে রয়েছে। সরকার ও সরকারি দলের হাজারো উসকানি, সহিংসতা ও নাশকতার বিভিন্ন অপচেষ্টা মোকাবেলা করে শান্তিপূর্ণ পথে এই আন্দোলন এগিয়ে চলেছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে বলা হয়, নিয়মতান্ত্রিক শাস্তিপূর্ণ গণআকাঙ্খার এ আন্দোলন দমনে সরকার ও সরকারি দল দেশব্যাপী নজিরবিহীন এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। বিরোধী দল তথা জনগণের এই ন্যায্য আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। তারা হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা গায়েবি মামলাকে বিরোধী দল দমনের প্রধান অবলম্বনে পরিণত করেছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহের মহাসমাবেশে সরকার ও সরকারি দলের পরিকল্পিত সহিংসতা ও নাশকতার নজিরবিহীন দুঃখজনক ঘটনাবলীর পর এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ৮৩৭ এর অধিক হয়রানিমূলক গায়েবি মামলায় ২০,৩২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ৭৩,১২৩ জন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে। আহত হয়েছেন ৮২৪৯ জনের অধিক নেতাকর্মী। নিহত হয়েছেন একজন সাংবাদিকসহ বিএনপির ১৭ জন। আর ৩৫টি মিথ্যা মামলায় গত ৩ (তিন) মাসে ৬৩৬ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এক লাখ পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক মামলায় বিএনপি ও বিএনপির সহযোগী গণসংগঠনসমূহের ৫০ লাখের বেশি নেতাকর্মী- সমর্থকদেরকে আসামি করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, বীরউত্তম, পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাসুদুর রহমান, অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ, অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান মিলন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ টিপু ও অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট দিদারুল আলম ও অ্যাডভোকেট লোকমান শাহ্ বর্তমানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়রানিমূলক জিঘাংসার শিকার হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন। সরকারের এই নিপীড়ন চিত্রই প্রমাণ করে দেশে আজ কতটা ভয়াবহ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিরোধী মতকে নির্মূলের চেষ্টা চলছে।
অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আমাদের আদালত সমূহ স্বাধীনভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারছে না। বিচারকাজ পরিচালনায় রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রতিফলন দৃশ্যমান। জাতি হিসাবে বিরোধী নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা, গায়েবি, হয়রানিমূলক মামলা দায়ের, গৃহহারা করা, অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখা, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, জামিন প্রদান না করা, গণহারে সাজা প্রদানের মত নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা আমাদেরকে ব্যাপকভাবে হতাশ করছে। এর ফলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সমালোচিত হচ্ছে।