কারাগারের সবচেয়ে বাজে জিনিস খাবার : সঞ্জয় দত্ত
কারাগার থেকে বেরিয়ে এখন মুক্ত মানুষ সঞ্জয় দত্ত। নতুন ছবিতে কাজ করা নিয়ে কথাবার্তাও চলছে। তবে সঞ্জয় জানিয়েছেন, কারাজীবন এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাঁকে।
১৯৯৩ সালে মুম্বাইয়ে সিরিজ বোমা হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৪২ মাস পুনের ইয়ার্দা কারাগারে ছিলেন সঞ্জয়। ৫৩ বছর বয়সী এই অভিনেতা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান। ১০৩ দিনের সাজা মওকুফ করা হয় সঞ্জয়ের।
কারাজীবন এবং নিজের জীবনের অনেক ঘটনা নিয়ে ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়া টুডের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন সঞ্জয় দত্ত।
এক সাক্ষাৎকারে ইন্ডিয়া টুডেকে সঞ্জয় বলেন, ‘আমি নির্জন কারাবাসে ছিলাম। মুক্তির অনুভূতি উপভোগ করতে আমার আরো কিছু সময় লাগবে। এখনো পুরোপুরি নিজেকে মুক্ত মনে হচ্ছে না। গত ২৩ বছর ধরে আমি কারাগারের ভেতরে ও বাইরে ছিলাম। অনেক ধরনের নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে গিয়েছি, অনেক রকম অনুমতি নিতে হয়েছে। এত বছর পর একজন মুক্ত মানুষের জীবনে মানিয়ে নিতে আমার কিছুটা সময় লাগছে।’
সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় দত্ত আরো বলেন, ‘কারাগার আসলে যতটা না শারীরিক শাস্তি তার চেয়েও বেশি মানসিক শাস্তি। কারাগারের মধ্যে আপনাকে সব সময় অন্যের কথামতো চলতে হবে।’
সঞ্জয় জানান, অনেকেই হয়তো ভেবে থাকেন কারাগারে তাঁকে আলাদা সমাদর করা হয়েছে। কিন্তু সেটা ভুল ধারণা। আর দশটা কয়েদির মতোই তিনি সেখানে ছিলেন বলে জানান সঞ্জয়। একই ধরের খাবার খেতে হতো তাকে, কয়েদিদের পোশাকই পরতে হতো।
সঞ্জয়ের ভাষায়, ‘আমি কোনো ভিআইপি সুবিধা পাইনি। বলতে গেলে, সাধারণ কয়েদিদের তুলনায় আমাকে আরো কম সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কারণ যাতে সবাই না ভাবে যে আমি বাড়তি সুবিধা পাচ্ছি। কারাগারের সবচেয়ে বাজে জিনিস ছিল এর খাবার। এত বাজে খাবার যে মুখে তোলা যায় না।’
বলিউডের মুন্নাভাই সঞ্জয় জানান, এই কারাজীবন তাঁর জন্য যেমন দুঃসহ ছিল, তেমনি ছিল তাঁর পরিবারের জন্য। নিজেকে দেশপ্রেমিক দাবি করে সঞ্জয় জানান, তিনি তাঁর দেশকে ভালোবাসেন।
সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘এত বছর ধরে কারাগার আমাকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে। বিশেষ করে আমার বাবার জন্য এটা যন্ত্রণাদায়ক ছিল। নিজের দেশের ক্ষতি করার কথা আমি চিন্তাও করতে পারি না। এই কারাযন্ত্রণা আমাকে খুব ভুগিয়েছে। আমার ভক্তদের আমি ধন্যবাদ জানাই, তারা আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছিল।’
সঞ্জয়ের বাবা সুনীল দত্ত একজন অভিনেতা ছিলেন, যিনি পরবর্তীতে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০০৫ সালে মারা যান তিনি। বাবার সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণা করে সঞ্জয় বলেন, ‘আমার মনে হয় না আমাকে নিয়ে বাবার মধ্যে কোনো কষ্ট ছিল। বাবা জানতেন, আমি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। মৃত্যুর আগে বাবা জানিয়েছিলেন, তিনি আমাকে নিয়ে গর্ব করেন।’
কারাজীবন কাটিয়ে সঞ্জয়ের এখন কেমন লাগছে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো অনুশোচনা নেই। বিগত বছরগুলোতে আমি অনেক কিছু শিখেছি। কারাজীবন আমাকে নতুন করে তৈরি করেছে। আমি আইনের প্রতি আরো শ্রদ্ধাশীল হয়েছি। আমার মনে হয় প্রত্যেকটা নাগরিকেরই তার দেশের আইন সম্পর্কে জানা উচিত। কিন্তু হ্যাঁ, নিজের বাড়িতে অস্ত্র রাখার জন্য আমি অনুতপ্ত।’
নিজের মাদকাসক্তির ব্যাপারেও খোলামেলা কথা বলেন সঞ্জয়। তিনি জানান, মা নার্গিস দত্তের মৃত্যুর পরই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
সঞ্জয় বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত জীবনে খুবই লাজুক একজন মানুষ। মায়ের মৃত্যুর পরেই আমি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ি এবং এই আসক্তি বাড়তেই থাকে। তখন যে মাদক ছিল, সবগুলোই আমি নিয়েছি।’
তাঁর এই মাদকাসক্তির কারণে পরিবারের সদস্যদের ওপর কোনো প্রভাব পড়েছিল কি না জানতে চাইলে সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘আমার বাবা বুঝতে পারছিলেন না, আমার কী সমস্যা হচ্ছে। তিনি পাঞ্জাবি ছিলেন। তারপর একদিন আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না, তখন বাবা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এটা ৪০ বছর আগের ঘটনা। এরপর আমি আর কখনো পেছন ফিরে তাকাইনি।’