দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হুইপ সামশুল হক ও তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৪১ গুণ
দেড় দশকে জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪১ গুণ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দেওয়া হলফনামায় তার সম্পদের বিবরণের সঙ্গে ২০০৮ সালে জমা দেওয়া হলফনমার বিবরণের তুলনা করে এ তথ্য পাওয়া যায়।
গত ৩০ নভেম্বর ইসিতে হলফনামা জমা দেন সামশুল হক। এতে দেখা যায়, ২০০৮ সালে জমা দেওয়া হলফনামার চেয়ে সামশুল হক ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪১ গুণ। একইসঙ্গে নিজের আয় বেড়েছে প্রায় ২১ গুণ।
সামশুল হক বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও এবার তাকে মনোনয়ন দেয়নি দলটি। তাই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়েছেন।
২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, সেসময় তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্য ভাড়া থেকে ৪৫ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হতো তার। ওই সময়ে স্ত্রী কিংবা নির্ভরশীলদের কোনো আয় ছিল না হলফনামায়। ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে সামশুল হক চৌধুরীর হাতে নগদ ছিল এক হাজার ৩৬৯ টাকা। লিমিটেড কোম্পানির ৪০টি শেয়ার ছিল। যার মূল্য দেখানো হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি টয়োটা গাড়ি ছিল। স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু ছিল ২৫ হাজার টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল ৩০ হাজার টাকার এবং ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ছিল। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ছয় লাখ ৭৫ হাজার টাকার অকৃষি জমি, হালিশহর হাউজিং এস্টেট এবং রিয়াজ উদ্দিন বাজারে দুটি দালানের দাম দেখানো ছিল ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ওই সময়ে ২৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকার ঋণ ছিল সামশুল হক চৌধুরীর।
অন্যদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলে দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, বর্তমানে স্ত্রীসহ হুইপের বার্ষিক আয় ৮৮ লাখ ৫২ হাজার ১৯৮ টাকা। এর মধ্যে স্ত্রীর বার্ষিক আয় রয়েছে ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৮ টাকা। বার্ষিক আয়ের মধ্যে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকানসহ অন্য ভাড়া খাতে আয় ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৪ টাকা। ব্যবসা খাতে আয় ছয় লাখ ৫০ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র কিংবা ব্যাংক আমানত খাতে আয় সাত লাখ ৯৬ হাজার ১০৮ টাকা। হুইপের ভাতা খাতে ১১ লাখ চার হাজার এবং অন্য খাতে আয় রয়েছে ২৩ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৮ টাকা। একইভাবে হুইপপত্নীর আয়ের মধ্যে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকানসহ অন্য ভাড়া খাতে বছরে আয় চার লাখ ১৫ হাজার ৮০০ টাকা। ব্যবসা খাতে আয় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র খাতে আয় চার লাখ ৬০ হাজার ৮০০ টাকা এবং ব্যাংক আমানতের সুদ হিসেবে আয় ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা।
অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে বর্তমানে হুইপের হাতে নগদ রয়েছে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৬২৪ টাকা ও ১০ হাজার ৩২ ডলার সাত সেন্ট। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৬১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯ টাকা।
গণনা প্রপার্টিজ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ২৬০০ শেয়ার রয়েছে হুইপের। এই শেয়ারের দাম দেখানো হয়েছে দুই লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের এক হাজার শেয়ার রয়েছে সামশুল হক চৌধুরীর। এসব শেয়ারের মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকার। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৩০ লাখ টাকার। এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের একটি এবং ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মিলে মোট দুটি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি রয়েছে হুইপ সামশুলের।
১৫ বছর আগের মতোই বর্তমানে স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু ২৫ হাজার টাকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৩০ হাজার টাকার এবং ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। অন্য খাতে অস্ত্র ও ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে দেখানো হয়েছে ২২ লাখ ১৩ হাজার ৯২৭ টাকা।
একইভাবে হুইপপত্নীর নগদ টাকা রয়েছে ২৮ লাখ ২৬ হাজার ৯৮৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮২ টাকা। গণনা প্রপার্টিজ লিমিটেডের শেয়ার রয়েছে ২০০০টি। এসব শেয়ারের দাম দেখানো হয়েছে দুই লাখ টাকা। একইভাবে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের হুইপের সমপরিমাণ এক হাজার শেয়ার রয়েছে হুইপপত্নীর। এসব শেয়ারের মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে দুই কোটি ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯১ টাকার। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫০ লাখ টাকার এবং ব্যাংকে ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) রয়েছে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকার।
এই সময়ে নতুন করে স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু যুক্ত হয়েছে ৩০ তোলা। যার মূল্য দেখানো হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী এক লাখ টাকা এবং আসবাবপত্র রয়েছে ৬০ হাজার টাকার। বর্তমানে ব্যবসায়িক মূলধন রয়েছে ৯ লাখ ৭ হাজার ৬১৩ টাকার।
এবার দাখিল করা হলফনামায় বলা হয়, সামশুল হকের স্থাবর সম্পত্তিতে কৃষি জমি না থাকলেও রয়েছে ৭৪ লাখ সাত হাজার ৯২০ টাকা পরিমাণের অকৃষি জমি। তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪৭ লাখ ৭০ হাজার ২৫০ টাকার মূল্যের অকৃষি জমি। রয়েছে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকার দালান। স্ত্রীর নামে রয়েছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের আটটি টিনশডে গোডাউন, নিজের নামে ৪৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের পাঁচ কাঠা জমিসহ চারতলা ভবন রয়েছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, ছয় লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমির কথা। ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের দালানের তথ্য দিয়েছিলেন তখন। সেবার স্ত্রীর নামে স্থাবর কোনো সম্পদ নেই বলে হলফনমায় উল্লেখ করা হয়েছিল।