গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর ১০ বছরে আয় বেড়েছে ৫০ গুণ
ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। জন্ম ১৯৭০ সালের ২৫ জানুয়ারি। বাবা প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য শামছুল হক, মা আম্বিয়া খানম।
শরীফ আহমেদ ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ফুলপুর সরকারি কলেজ থেকে বিএ (পাস) এবং ১৯৯৭ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে ইতিহাসে এমএ পাস করেন।
গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের বাবা মরহুম মো. শামছুল হক এই আসন থেকে পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি (শরীফ আহমেদ) আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০১৩ সালে তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে ১০ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য পদে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে মন্ত্রিসভায় সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১০ বছরে তাঁর আয় বেড়েছে প্রায় ৫০ গুণ।
শরীফ আহমেদ ময়মনসিংহ-২ আসনে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার বরাবরে যে হলফনামা দাখিল করেছেন, তাতে ১০ বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৫০ গুণ। পাশাপাশি বেড়েছে তাঁর স্ত্রী শেফালী বেগমের আয়ও। তাঁর স্ত্রী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত।
দশম সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় শরীফ আহমেদের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছিল। আর এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছেন এক কোটি ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৬৩৬ টাকা। দেখা যাচ্ছে, ১০ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় ৫০ গুণ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় শরীফ হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, স্ত্রীর নামে ১০ তোলা সোনা রয়েছে; যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য টিভি-ফ্রিজ ২৫ হাজার, ২৫ হাজার টাকা মূল্যের খাট, সোফা, ডাইনিং টেবিল ছিল। এর বাইরে আর কোনো হিসাব উল্লেখ ছিল না হলফনামায়।
পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন তাতে দেখা যায়, তার আয় ও সম্পদ বেড়েছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ বার্ষিক আয় দেখানো হয় এক লাখ ২৬ হাজার টাকা। মৎস্য খামার থেকে আয় দেখানো হয় ১৫ লাখ টাকা। ব্যাংক আমানত থেকে আয় দুই লাখ ৮৫ হাজার ৬৮০ টাকা আর সংসদ সদস্যদের বার্ষিক সম্মানী ভাতা দেখানো হয়েছিল ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা।
দশম সংসদ নির্বাচনি হলফনামায় স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না, একাদশের সময় স্ত্রীর আয় দেখানো হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৩৬ টাকা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বর্তমান প্রতিমন্ত্রীর নগদ অর্থ ছিল ৮ হাজার ৯৭১ টাকা এবং ব্যাংকে জমা ছিল এক কোটি চার লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৬ টাকা। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে তাঁর কোনো গাড়ি ছিল না, সংসদ সদস্য হওয়ার পর ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি কিনেছেন।
দশম সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় স্ত্রীর ১০ তোলা স্বর্ণ দেখানো হলেও একাদশের সময় তা দেখানো হয় নিজের। টিভি, ফ্রিজের মূল্য দেখানো হয় ২৫ হাজার টাকা। খাট, সোফা, ডাইনিংয়ের মূল্য দেখানো হয় ২৫ হাজার টাকা।
শরীফ আহমেদের প্রথমবার সংসদ সদস্য হওয়ার সময় অকৃষি জমি, আবাসিক-বাণিজ্যিক কোনো স্থাপনা না থাকলেও পরে পৈতৃক সূত্রে অকৃষি জমি পান ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। একইসঙ্গে বহুতল ভবনের ওপর পাঁচতলা ডবল ইউনিটের বাসাও পেয়েছেন তিনি। ফারমার্স ব্যাংকে গাড়ির কেনায় ২০ লাখ ৯২ হাজার ৪০৩ টাকা ঋণ দেখান তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া হলফনামা দেখা যায়, কৃষি খাতে আয় না থাকলেও বাড়ি ভাড়া বাবদ তার বার্ষিক আয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর মৎস্য খামারে বছরে তার আয় এক কোটি টাকা। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সম্মানী ভাতা আট লাখ ২৮ হাজার টাকা। ব্যাংক মুনাফা পান আট লাখ ২০ হাজার ৬৩৬ টাকা। স্ত্রীর বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে নয় লাখ ৬০ হাজার ১৩০ টাকা। ব্যাংকে জমা টাকা থেকে বছরে মুনাফা হয় আট লাখ ২০ হাজার ৬৩৬ টাকা। নগদ টাকার পরিমাণও বেড়েছে। তার নগদ টাকা আছে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ১২৮ টাকা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় স্ত্রীর নগদ কোনো টাকা না থাকলেও এবার স্ত্রীর নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকার পরিমাণও বেড়েছে স্বামী-স্ত্রীর।
প্রতিমন্ত্রীর ব্যাংকে জমা আছে তিন কোটি ৭৬ লাখ সাত হাজার ৮৩২ টাকা, স্ত্রীর নামে রয়েছে ৭৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৪ টাকা। এবার তিনি ৯২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ির ক্রয়ের কথা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া টিভি-ফ্রিজ, খাট-সোফা-ডাইনিংয়ের মূল্য বাবদ ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী হয়ে এবার ৭৫ লাখ ২৫ হাজার টাকায় নারায়ণগঞ্জে শূন্য দশমিক ৩০০০ একর জমি কিনেছেন। হেবা মূল্যে পেয়েছেন ১১৮৩ দশমিক ৬৬ অযুতাংশ। বহুতল ভবনের উপর পাঁচতলা ডবল ইউনিটের বাসা পেয়েছেন পৈতৃক সূত্রে। নতুন করে পৈতৃক সূত্রে তিনি ২০টি পুকুরও পেয়েছেন। হলফনামায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বাকিতে মৎস্য খাদ্য ক্রয়ের দেনা দেখানো হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। ২০০২ সালে তাঁর বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ চারটি মামলা থাকলেও আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন এবারের হলফনামায়।