আফিম চাষে আফগানিস্তানকে হটিয়ে শীর্ষে মিয়ানমার
২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসে তালেবান সরকার। ওই সময়ও আফিম চাষে বিশ্বের শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছিল দেশটি। তবে, আফিম বাণিজ্যে তালেবান সরকার কঠোর হওয়ায় আফগানিস্তানে এর চাষ কমেছে। এরপরেই আফিম চাষে দেশটিকে হটিয়ে শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার। জাতিসংঘ থেকে গতকাল মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর এএফপির।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধমূলক সংস্থা ইউএনওডিসির তথ্যমতে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত আনুমানিক এক হাজার ৮৯ টন আফিম উৎপাদন হয়েছে মিয়ানমারে। যা গত বছরে ছিল ৭৯০ টন। এই আফিম হেরোইন উৎপাদনের প্রধান উপাদান।
ইউএনওডিসি বলছে, গত বছরের এপ্রিলে আফিম চাষে নিষেধাজ্ঞা দেয় আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। এরপরেই দেশটিতে আফিমের চাষ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের এপ্রিলের পর থেকে আফগানিস্তানে ৩৩০ টন আফিমের উৎপাদন হয়েছে।
এএফপি জানিয়েছে, মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ড, এই তিন দেশের সীমান্তে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল অবস্থিত। মাদক চাষ ও চোরাচালানের জন্য এই এলাকা প্রসিদ্ধ।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নোবেলজয়ী নেতা অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দেশটিতে সহিংসতা চলছে। বিদ্রোহীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে জান্তা সরকার। সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার পরই দেশটির অনেক চাষি আফিম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাটির ধারণা, ২০২২-২৩ বছরে মিয়ানমারে যতটুকু আফিম চাষ হবে তা সবশেষ ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইউএনওডিসি বলছে, মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা আফিম চাষের জন্য উপযুক্ত। সেখানে এর চাষ বাড়ছে। এর মূলে রয়েছে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উন্নত সেচ এবং সারের ব্যবহার। এতে করে আফিমের ফলনও বাড়ছে।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের মুখপাত্রের মন্তব্য চেয়েও পায়নি এএফপি। তবে, দেশটির একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা যিনি কি না মাদক নির্মূল ইউনিটে কাজ করেন, তিনি বলেছেন, ‘অভ্যন্তরীণ সহিংসতার জন্য আফিম ক্ষেত শনাক্ত ও ধ্বংসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বেগ পোহাতে হচ্ছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘নিরাপত্তা ছাড়া, আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারি না।’
এএফপি জানিয়েছে, মিয়ানমারের সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়ে থাকে শান প্রদেশে। তবে, এই প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সহিংসতা বেড়েছে। সেখানে বিরোধী কিছু গোষ্ঠী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মিয়ানমারের ৪১ হাজার ৩০০ হেক্টর বা এক লাখ দুই হাজার ৫৪ একর জমিতে আফিমের চাষাবাদ করা হয়। এর মধ্যে শান প্রদেশেই ৮৮ শতাংশ চাষাবাদ হয়। ইউএনওডিসি বলছে, শান প্রদেশে পশ্চিমাঞ্চলে প্রতি হেক্টর জমিতে আফিমের গড় উৎপাদন বেড়েছে ১৯ দশমিক আট কিলোগ্রাম। শান প্রদেশটি মিয়ানমারের মোট ভূমির প্রায় এক-চতুর্থাংশ। এই অঞ্চলটি গিরিখাত, জঙ্গল ও পাহাড়ে ঘেরা।