আমি মালালা বলছি
আমাদের স্কুল বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল
৭.
যে মুফতি আমাদের স্কুল বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন
আমার জন্মস্থান সেই খুশাল স্ট্রিটের স্কুলটার ঠিক সামনে এক লম্বা সুদর্শন মোল্লা এবং তাঁর পরিবার থাকত। তাঁর নাম গুলামুল্লাহ এবং তিনি নিজেকে মুফতি বলে পরিচয় দিতেন, যার অর্থ ইসলামি পণ্ডিত ও ইসলামি আইনের বিশেষজ্ঞ। যদিও বাবা বলতেন যে, পাগড়ি পরা যে কেউই নিজেকে মাওলানা বা মুফতি বলে পরিচয় দিতে পারেন। স্কুলটা ভালোই চলছিল এবং বাবা ছেলেদের হাইস্কুলে ধনুকাকৃতির তোরণ নির্মাণের মাধ্যমে একটি চিত্তাকর্ষক অভ্যর্থনা ডেস্ক তৈরি করেছিলেন। জীবনে প্রথমবারের মতো মা সুন্দর জামা কিনতে পেরেছিলেন এবং গ্রামে যেমনটি স্বপ্ন দেখতেন তেমন ভাবে খাবারের অর্ডার দিতেও সমর্থ হন। কিন্তু মুফতি সেসব বিষয়ে কড়া নজর দিলেন। তিনি প্রতিদিন মেয়েদের স্কুলে আসতে এবং যেতে পরখ করে দেখতেন। ওসব মেয়েদের মধ্যে কিছু সংখ্যক কিশোরী থাকায় ভীষণ রেগে গেলেন। ‘ওই মাওলানা আমাদের প্রতি বদ নজর দিচ্ছে,’ বাবা একদিন বললেন। তিনি ঠিকই বলে ছিলেন। কিছুদিন পরই স্কুলের জমির মালিক মহিলাটির কাছে সেই মুফতি বললেন, ‘জিয়াউদ্দিন তোমার ভবনে একটি হারাম স্কুল চালিয়ে মহল্লার জন্য লজ্জা ডেকে আনছে। এই মেয়েদের পর্দা করা উচিত।’ তিনি আরো বললেন, ‘ভবনটি তাঁর কাছ থেকে ফেরত নিয়ে আমাকে মাদ্রাসার জন্য ভাড়া দাও। এটা করলে তুমি এখনই টাকা পাবে এবং পরকালেও পুরস্কৃত হবে।’
তিনি রাজি হলেন না এবং তাঁর ছেলে লুকিয়ে বাবার কাছে এলো। ‘এই লোক তোমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে’, সে সাবধান করে দিল। ‘আমার ভবনটা দেব না, কিন্তু তুমি সাবধানে থেক।’
বাবা রেগে গেলেন। তিনি বললেন, “আমরা বলি, ‘অধের্ক ডাক্তার জীবনের জন্য বিপজ্জনক’ তেমনি, ‘অর্ধশিক্ষিত মোল্লা ঈমানের জন্য বিপজ্জনক’।”
পৃথিবীর প্রথম মুসলিম আদি নিবাস হিসেবে আমাদের দেশটা সৃষ্ট হয়েছিল বলে আমি গর্বিত, কিন্তু এটার অর্থটার সাথে আমি একমত। কোরআন আমাদের ‘সবর’ বা ধৈর্য শেখায়, কিন্তু মাঝেমধ্যে মনে হতো এই শব্দটা আমরা ভুলে গেছি এবং মনে করি যে ইসলাম শুধু মহিলাদের পর্দা করে বা বোরখা পরে বসে থাকতে এবং ছেলেদের জিহাদ করতেই বলেছে। পাকিস্তানে ইসলামের অনেক ধারা প্রচলিত আছে। আমাদের স্থপতি জিন্নাহ ভারতে মুসলিমদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভারতের সিংহভাগ মানুষ ছিল হিন্দু। দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ হলেই তারা আলাদা বাড়িতে থাকতে রাজি হয়ে যেত। তাই ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত ১৯৪৭ সালে ভাগ হয়ে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের জন্ম হলো। এর চেয়ে রক্তাক্ত সূচনা আর হতে পারে না। লক্ষ লক্ষ মুসলিম ভারত ছেড়ে গেল, আর হিন্দুরা অন্য পারে রয়ে গেল। নতুন সীমান্ত পার হতে গিয়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা গেল। রক্তাক্ত মৃতদেহভর্তি লাহোর ও দিল্লিগামী ট্রেনেও কাটা পড়ল অনেকে। আমার নিজের দাদা একটুর জন্য রায়টে খুন হওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। দিল্লিতে পড়াশোনা করতেন তিনি, সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে হিন্দুরা তাঁর ট্রেন আক্রমণ করেছিল। এখন আমরা ১৮ কোটি মানুষের দেশে থাকি, যেখানে ছিয়ানব্বই শতাংশ মুসলমান। আমাদের প্রায় ২০ লাখ খ্রিস্টান এবং ২০ লাখেরও বেশি আহমাদি(যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে কিন্তু সরকার তা মানে না) আছে।
জিন্নাহ তরুণ বয়সে লণ্ডনে থাকতেন এবং আইনজীবী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি সহনশীল একটা দেশ চাইতেন। আমাদের জনগণ স্বাধীনতার কয়েকদিন আগে তাঁর দেওয়া একটি বিখ্যাত ভাষণের কথা প্রায়ই উল্লেখ করে : ‘পাকিস্তান রাষ্ট্রে তোমার মন্দির, মসজিদ বা অন্য যেকোনো উপাসনালয়ে যেতে পার। তুমি যেকোনো ধর্ম বা গোত্র বা ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে পারো- কিন্তু সেটার সাথে রাষ্ট্রের কাজের কোনো সম্পর্ক নেই।’ বাবা বলেন, সমস্যাটা হচ্ছে জিন্নাহ আমাদের জন্য ‘রিয়েলএস্টেট’ বা ভূসম্পত্তির কথা আলোচনা করে গেছেন কিন্তু ‘স্টেট’ বা রাষ্ট্রের কথা আলোচনা করেননি।
পাকিস্তানের জন্মের ঠিক এক বছর পর তিনি যক্ষ্মায় মারা যান এবং তখন থেকেই আমরা যুদ্ধ করছি। ভারতের সাথে আমাদের তিনটা যুদ্ধ হয়েছে। এটা ছিল দেশের ভেতরেই অফুরন্ত খুনাখুনির মতো।
আমরা মুসলমানরা সুন্নি এবং শিয়া- এই দুই ভাগে বিভক্ত। আমরা একই মৌলিক বিশ্বাস এবং একই কুরআন শরিফ মানি, কিন্তু সপ্তম শতকে নবিজীর ইন্তেকালের পর আমাদের ধর্মনেতা হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি কে- এ ব্যাপারে বাদানুবাদ আছে। নির্বাচিত খলিফা ছিলেন নবিজীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং উপদেষ্টা আবু বকর, যাঁকে নবিজী তাঁর মৃত্যুশয্যায় প্রার্থনা করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। আরবি শব্দ ‘সুন্নি’ অর্থ- ‘যে নবিজীর সংস্কৃতি পালন করে।’ কিন্তু ছোট একটা পক্ষ বিশ্বাস করে, যে নেতৃত্ব নবিজীর পরিবারের মাঝেই থাকা উচিত ছিল এবং তাঁর চাচাত ভাই ও মেয়েজামাই আলীই নেতৃত্বের যোগ্য ছিল। তারা ‘শিয়া’ নামে পরিচিত হলো, যা আলীর দল ‘শিয়া-তি-আলী’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
মোহররম উৎসবের মাধ্যমে শিয়ারা ৬৮০ খ্রিস্টাব্দের রক্তাক্ত কারবালা যুদ্ধে মহানবীর প্রপৌত্র হুসেইন ইবনে আলীর হত্যাকাণ্ডকে প্রতিবছর স্মরণ করে। রাস্তা রক্তে লাল না হওয়া পর্যন্ত তারা ধাতব শিকল বা দড়িতে বাঁধা ছুরি দিয়ে নিজেদের আঘাত করতে থাকে। আমার বাবার এক বন্ধু শিয়া এবং তিনি যখনই কারবালায় হুসেইনের মৃত্যুর কথা বলেন তখনই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি এতই আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন যে মনে হয়, ঘটনাটি ১৩০০ বছরেরও আগে নয় মাত্র গত রাতে ঘটেছে। আমাদের জাতির পিতা জিন্নাহ শিয়া ছিলেন, এবং বেনজীর ভুট্টোর মা ছিলেন ইরান থেকে আগত একজন শিয়া।
আমাদের মতো বেশির ভাগ পাকিস্তানিই সুন্নি- প্রায় ৮০ শতাংশ- কিন্তু এরপরও আমাদের আরো ভাগ আছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দল হলো বারেলভি, যাদের নামকরণ হয়েছে ভারতের উত্তর প্রদেশের উনিশ শতকের বারেইল্লির একটি মাদ্রাসার নামে। এরপরের দল দিওবান্দি, যেটা উত্তর প্রদেশের দিওবান্দ গ্রামের উনিশ শতকের একটি মাদ্রাসার নামে নামকরণকৃত। তারা খুবই রক্ষণশীল এবং আমাদের বেশির ভাগ মাদ্রাসাই দিওবান্দি। আমাদের আহলে হাদিস (হাদিসের অনুসারী) আছে, আছে সালাফিস্ট। এই দলটা সবচেয়ে বেশি আরব প্রভাবিত এবং সবচেয়ে বেশি রক্ষণশীল। এদেরকেই পশ্চিমারা বলে মৌলবাদী। তারা আমাদের তীর্থস্থান এবং সাধুদের মানে না- অনেক পাকিস্তানিই আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব এবং নৃত্য ও উপাসনা করতে তারা সুফিদের মাজারে যায়। এই প্রতিটি ধারারই বিভিন্ন উপবিভাগ আছে।
খুসাল স্ট্রিটের সেই মাওলানা তাবলিগি জামাতের সদস্য ছিলেন, যেটা দিওবান্দিদের একটি দল এবং প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে লাহোরের কাছে রাইউইন্দে তাদের মূল কার্যালয়ে বিশাল র্যালির আয়োজন করে। আমাদের সর্বশেষ স্বৈরশাসক জিয়া সেখানে যেতেন এবং আশির দশকে তাঁর শাসনামলে তাবলিগিরা অত্যন্ত ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। আর্মি ব্যারাকে নিয়োগকৃত অনেক ইমামই ছিলেন তাবলিগি এবং প্রায়ই দলের হয়ে ধর্মপ্রচার অভিযানে যেতে সৈন্যদের ছুটি নেওয়া লাগত।
এক রাতে আমাদের লিজ বাতিল করতে জমিদার মহিলাটিকে রাজি করাতে ব্যর্থ হওয়ার পর সে কিছু প্রভাবশালী লোক এবং মহল্লার নেতাদের নিয়ে আমাদের বাসায় এলো। সাতজন লোক ছিল- কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ তাবলিগি, মসজিদের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, একজন প্রাক্তন জিহাদি এবং একজন দোকানদার। তারা আমাদের ছোট বাসাটা ভরে ফেলল।
বাবাকে চিন্তিত মনে হলো এবং তিনি আমাদের পাশের কক্ষে পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু বাসাটা ছোট হওয়ায় আমরা প্রতিটা শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। মোল্লা গুলামুল্লাহ বললেন, ‘আমি উলেমা এবং তাবলিগ ও তালেবানদের প্রতিনিধিত্ব করছি,’ একটা নয়, দুই দুইটা মুসলিম আলেমদের সংগঠনের কথা উল্লেখ করে নিজের দাম বাড়াতে চাইলেন। ‘আমি প্রকৃত মুসলিমদের প্রতিনিধি এবং আমি মনে করি আপনার বালিকা বিদ্যালয়টি হারাম এবং ধর্মের জন্য অবমাননাকর। এই স্কুল বন্ধ করা উচিত। মেয়েদের স্কুলে যাওয়া উচিত নয়।’ সে বলে চলল, ‘মেয়েরা এত পবিত্র যে তাদের পর্দায় থাকতে হবে, এতই গোপনীয় যে কুরআনে কোনো মেয়ের কথা উল্লেখ নেই কারণ আল্লাহ মেয়েদের কথা উল্লেখ করতে চান না।’
বাবা আর সহ্য করতে পারলেন না। ‘মরিয়ামের নাম কুরআনের সবখানেই উল্লেখ আছে। সে কি নারী বা ভালো নারী ছিলেন না?’
‘না,’ মোল্লা বললেন। ‘ঈসা (যীশু) আল্লাহর পুত্র না বরং মরিয়ামের পুত্র, শুধু এটুকু প্রমাণ করতেই তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।’
‘সেটা হতে পারে,’ বাবা জবাব দিলেন। ‘কিন্তু আমি শুধু দেখাতে চাইছি যে কুরআনে মরিয়ামের নাম আছে।’
মোল্লা প্রতিবাদ করা শুরু করল, কিন্তু বাবা ভাবলেন, যথেষ্ট হয়েছে। তিনি দলটির দিকে ফিরে বললেন, ‘রাস্তায় এই ভদ্রলোক যখন আমার পাশ দিয়ে যায়, আমি তাকে সালাম জানাই, কিন্তু সে জবাব দেয় না বরং মাথা নিচু করে থাকে।’
মোল্লা বিব্রত হয়ে নিচের দিকে তাকালেন, কারণ কাউকে ভালোমত সম্ভাষণ জানানো ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ। ‘আপনি হারাম স্কুল চালান,’ তিনি বললেন। ‘তাই আমি আপনাকে সালাম দেই না।’
অন্য লোকদের মধ্যে একজন কথা বলে উঠল। ‘আমি শুনেছি আপনি নাস্তিক,’ তিনি বাবাকে বললেন। ‘কিন্তু আপনার ঘরে তো কুরআন শরিফ আছে।’
‘অবশ্যই আছে!’ বাবার ঈমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তিনি খুব আশ্চর্য হলেন। ‘আমি একজন মুসলিম।’
‘আমরা স্কুলের ব্যাপারটায় ফিরে যাই,’ মুফতি যখন দেখলেন তাঁর কথামত আলোচনা চলছে না তখন এ কথা বললেন। ‘স্কুলের রিসিপশনে পুরুষ আছে এবং তারা দেখে মেয়েরা স্কুলে ঢুকছে। এটা খুবই খারাপ।’
‘আমার কাছে একটা সমাধান আছে। স্কুলের আরেকটা গেট আছে, মেয়েরা সেটা দিয়ে ঢুকবে,’ বাবা বললেন।
পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল মোল্লা অসন্তুষ্ট, কারণ তিনি স্কুলটা বন্ধ করে দিতে চাইছিলেন। কিন্তু মুরব্বিরা এই মীমাংসায় খুশি হয়ে চলে গেলেন।
বাবার সন্দেহ হলো, এটাই শেষ নয়। আমরা একটা জিনিস জানতাম যেটা তারা জানত না- মুফতির আপন ভাতিজি গোপনে স্কুলে আসত। তাই কয়েকদিন পর বাবা মুফতির বড় ভাই, মেয়েটির বাবাকে ডেকে পাঠালেন।
‘আপনার ভাইয়ের যন্ত্রণায় আমি অতিষ্ঠ,’ বাবা বললেন। ‘সে কেমন মোল্লা? আমাদেরকে সে পাগল করে তুলছে। আপনি কি তাকে আমাদের পিছু ছাড়াতে সাহায্য করতে পারেন না?’
‘দুঃখিত জিয়াউদ্দিন, আমি বোধহয় আপনাকে সাহায্য করতে পারব না।’ তিনি বললেন, ‘আমার বাসায়ও ঝামেলা চলছে। সে আমাদের সাথে থাকে এবং তার স্ত্রীকে বলেছে আমাদের সামনে পর্দা করতে, আর আমাদের স্ত্রীদের বলেছে তার সামনে পর্দা করতে। আমাদের স্ত্রীরা তার কাছে বোনের মতো আর তার স্ত্রী আমাদের কাছে বোনের মতো, কিন্তু এই পাগল বাসাটাকে দোযখ বানিয়ে ছেড়েছে। আমি দুঃখিত, কিন্তু আমি আপনাকে আহায্য করতে পারছি না।’
বাবা ঠিকই ভেবেছিলেন, এই লোকটা হাল ছাড়বে না- জিয়ার শাসন এবং ইসলামায়নের পর মোল্লাদের হাতে অনেক ক্ষমতা এসে গেছে।
কোনো কোনো দিক দিয়ে জেনারেল জিয়ার চেয়ে জেনারেল মোশাররফ আলাদা ছিলেন। যদিও তিনি সাধারণত ইউনিফর্ম পরতেন, মাঝেমধ্যে তিনি ওয়েস্টার্ন স্যুট পরতেন এবং চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনস্ট্রেটরের বদলে নিজেকে চিফ এক্সিকিউটিভ হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি কুকুরও রাখতেন, যেটাকে আমরা মুসলমানরা অপরিষ্কার বা অপবিত্র মনে করি। জিয়ার ইসলামীকরণের পরিবর্তে তিনি ‘অজ্ঞতাযুক্ত সংযম’ শুরু করলেন। তিনি গণমাধ্যমকে যুক্ত করে নতুন প্রাইভেট চ্যানেল এবং মহিলা সংবাদপাঠিকা অনুমোদন করলেন এবং টিভিতে নৃত্য প্রদর্শনের অনুমতি দিলেন। পশ্চিমা উৎসব, যেমন ভালোবাসা দিবস এবং ইংরেজি নববর্ষ পালন করার অনুমতিও পাওয়া গেল। এমনকি তিনি স্বাধীনতা দিবসে বার্ষিক পপ কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন, যেটা সমগ্র জাতির উদ্দেশে প্রচার করা হতো। তিনি এমন একটা কাজ করলেন যেটা আমাদের গণতান্ত্রিক শাসকরা এমনকি বেনজিরও করেননি- একজন নারী ধর্ষিত হলে চারজন পুরুষ সাক্ষী হাজির করতে হবে—এই আইনের বিলুপ্তি ঘটিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে প্রথম নারী গভর্নর নিয়োগ দেন। এমনকি প্রথমবারের মতো নারী পাইলট এবং কোস্টগার্ডও নিয়োগ দেন। এমন ঘোষণাও দেন যে করাচিতে জিন্নাহর কবরে নারী পাহারাদার থাকবে।
তবুও উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী প্রদেশে আমাদের পশতুন মাতৃভূমিতে সবকিছু ছিল অন্যরকম।
(চলবে)