চিরনিদ্রায় শায়িত শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীন
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীনকে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। আজ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে খালেক বিন জয়েনউদদীনের মরদেহ ঢাকা থেকে তার জন্মভূমি কোটালীপাড়ায় নিয়ে আসা হয়।
এ সময় তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাদ আসর খালেক বিন জয়েনউদদীনের চিত্রাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
এর আগে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীনের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার এস এম শাহজাহান সিরাজ, কোটালিপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস, কবি খান চমন-ই-এলাহি, আওয়ামী লীগনেতা হাফিজুর রহমান, মোতাহার হোসেন সরদার, সাংবাদিক মিজানুর রহমান বুলু, গৌরাঙ্গ লাল দাসসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তার মরদেহ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাখা হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ এই গুণী লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রোববার রাতে রাজাবাজার মসজিদের সামনে খালেক বিন জয়েনউদদীনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
খালেক বিন জয়েনউদদীন (৭০) রাজধানী ঢাকার পূর্বরাজাবাজারস্থ নিজ বাসায় রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে মারা যান। তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিকদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
খালেক বিন জয়েনউদদীন ১৯৫৪ সালের ২৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আলহাজ মো. জয়েনউদ্দীন। খালেক বিন জয়েনউদদীন সীতাইকুণ্ড উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকার আবুজর গিফারী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বাংলা বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৭৫ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সাহিত্য অঙ্গনে খালেক বিন জয়েনউদদীন নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম আবদুল খালেক ফকির।
খালেক বিন জয়েনউদদীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোরের বারোবাজারে পাকিস্তানি সেনা ছাউনিতে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন এবং সাতমাস বন্দি থাকেন। চাকরি করেছেন জাতীয় জাদুঘর ও বাংলাদেশ বেতারে। দৈনিক ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরের বিভাগীয় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় দুই দশক। জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হবার পর ছড়া লিখে প্রতিবাদ করেন তিনি। ১৯৭৭ সালে সেই ছড়া প্রকাশিত হয় মাসিক সমকালে। ইতিহাসের বিপর্যয় ও বিকৃতির বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক সক্রিয় ছিলেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো– ‘ধান সুপারি পান সুপারি’, ‘আপিল চাপিল ঘন্টিমালা’, ‘চিরকালের ১০০ ছড়া’, ‘হৃদয়জুড়ে বঙ্গবন্ধু’, ‘নলিনীকান্ত ভট্টশালী’, ‘হুমায়ুননামা’, ‘মায়ামাখা শেখ রাসেল’, ‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেল’, ‘সাকিন টুঙ্গিপাড়া’, ‘কন্যে তুমি শেখ হাসিনা’, ‘একাত্তরের মিত্রমাতা ইন্দিরা গান্ধী’, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ’, ‘আতা গাছে তোতা পাখি’, ‘বঙ্গবন্ধু এবং রক্তাক্ত বাংলা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমান’, ‘একাত্তরের অশোক’, ‘টুঙ্গিপাড়া ও বত্রিশ নম্বরের সেই মানুষটি’, ‘বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলার গল্প’, ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু’, ‘বাংলাদেশের গণহত্যা ’৭১’, ‘ছোটদের বঙ্গবন্ধু’, ‘ছোটদের নজরুল’, ‘একাত্তর, পঁচাত্তর এবং বাংলাদেশ’।
অসংখ্য গ্রন্থের রচয়িতা খালেক বিন জয়েনউদদীন সাহিত্যচর্চার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পরিষদ, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, অগ্রণী ব্যাংক পুরস্কার, সাউন্ডবাংলা সম্মাননা, তরিকত মিশন, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ স্মৃতি পরিষদ, কোটালীপাড়া গুণীজন সংবর্ধনা লাভ করেন।