নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর যুক্তরাষ্ট্রে
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় আলাবামা অঙ্গরাজ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে এক খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার সমালোচনার মুখে দেশটিতে প্রথমবারের মতো এ পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ডের রায় বাস্তবায়ন করা হলো। খবর এএফপির।
দণ্ডিত কেনেথ ইউজিন স্মিথকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ২৫ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন রাজ্যটির অ্যাটর্নি জেনারেল স্টিভ মার্শাল। পরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বিচারের রায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৩৫ বছর আগের জঘন্য কাজের জন্য আজ রাতে কেনেথ স্মিথকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’
১৯৮৮ সালে একজন ধর্ম যাজকের স্ত্রীকে ভাড়াটে খুনি হিসেবে হত্যা করার জন্য স্মিথ (৫৮) গত তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা নিয়ে দিনযাপন করছিলেন।
আলাবামার রাজ্যের হোলম্যান জেলখানায় একটি কক্ষে স্মিথের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করতে তার ফেসমাস্কে নাইট্রোজেন গ্যাস পাম্প করে প্রবেশ করানো হয়। আর এর ফলে নাইট্রোজেন হাইপোক্সিয়ায় তার মৃত্যু ঘটে। শরীরে নিশ্বাসের মাধ্যমে নাইট্রোজেন ঢুকলে কোষগুলো ভেঙে যায় এবং মানুষ দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্মিথ দুই থেকে চার মিনিট চিৎকার ও চেঁচামেচি করেন। পাশাপাশি পাঁচ মিনিট ধরে গভীরভাবে শ্বাস নেন। এ ব্যাপারে আলাবামা সংশোধন কেন্দ্রের কমিশনার জন হাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্মিথ যতক্ষণ সম্ভব তার নিশ্বাস আটকে রাখার চেষ্টা করেছিল। এ সময় তার দেহ কাঁপছিল, সে হাঁপাচ্ছিল। আর এটি প্রত্যাশিতই ছিল।’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যুদণ্ড বিষয়ক তথ্যকেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক রবিন মাহের বলেছিলেন, আলাবামা রাজ্য আগে পরীক্ষা করা হয়নি এমন একটি পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে যাচ্ছে। মাহের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এই পদ্ধতিতে আগে কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি। আমি যতদূর জানি বিশ্বেও এটাই হবে এরকম প্রথম ঘটনা।’
এর আগে ২০২২ সালের নভেম্বরে স্মিথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রাণঘাতি ইনজেকশনের মাধ্যমে। কিন্তু এ কাজ করার সময় তার শরীরের নির্দিষ্ট ধমনী খুঁজে পাননি কারাগারের কর্মকর্তারা।
আলাবামা সংশোধন কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বৃহস্পতিবার সকালে স্মিথ শেষ খাবার হিসেবে স্টেক, হ্যাশব্রাউন ও ডিম খান।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাস ব্যবহার করে সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। সে সময় দোষী সাব্যস্ত হওয়া এক খুনির ওপর হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ২৪টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আর সবগুলোতেই প্রয়োগ করা হয়েছিল প্রাণঘাতি ইনজেকশন। নাইট্রোজেন হাইপোক্সিয়ার মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন আলাবামা ছাড়াও আরও দুটি রাজ্যে রয়েছে, রাজ্য দুটি হলো ওকলাহোমা ও মিসিসিপি।