শিশুদের ক্ষতি করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ক্ষমা চাইলেন জাকারবার্গ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে মার্কিন সিনেটরদের কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে ক্ষমাও চেয়েছেন জাকারবার্গ।
স্থানীয় সময় বুধবার (৩১ জানুয়ারি) মার্কিন সিনেটে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ার পর ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক ও অন্যান্য সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তির জন্য যেসব শিশুর ক্ষতি হয়েছে, তাদের বাবা-মা ও পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। একজন সিনেটর সরাসরি অভিযোগ করেন, জাকারবার্গরা এমন একটি প্রোডাক্ট (পণ্য) নিয়ে এসেছেন, যা মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে।
শুনানির সময় জাকারবার্গ ভুক্তভোগী শিশুদের অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আপনাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে, তা যেন অন্যদের না হয়।’
সিনেটের জুডিসিয়ারি কমিটি এই হাইটেক কর্তাদের ডেকেছিল এবং তাদেরকে কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করান। এ কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয় বিগ টেক অ্যান্ড অনলাইন চাইল্ড সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন ক্রাইসিস।
জাকারবার্গ ছাড়াও টিকটকের সিইও শাও জি চিউ, স্ন্যাপচ্যাটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ইভান স্পিগেল, ডিসকর্ড সিইও জেসন সিট্র এবং এক্স এর অনলাইন প্ল্যাটফর্মের প্রধানও ছিলেন।
সিনেটর ডিক ডুবিন ছিলেন এই জুডিসিয়ারি কমিটির প্রধান। তিনি বলেন, ‘এই কোম্পানিগুলো যে প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে, তা অনেক শিশুর কাছে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোম্পানিগুলো সুরক্ষার পেছনে যথেষ্ট অর্থ খরচ করেনি, প্রাথমিক সুরক্ষার থেকে লাভকেই বড় করে দেখেছে। এর ফলে বাচ্চারা বিপদের মধ্যে পড়েছে।’
সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, ‘জাকারবার্গ, আপনি ও আপনার কোম্পানিগুলোর কাজ আমাদের সামনে আছে। আমি জানি, আপনি কখনোই এরকম পরিস্থিতি চাইবেন না, তা সত্ত্বেও আপনার হাতে রক্ত লেগে আছে। আপনার প্রোডাক্ট মানুষকে মারছে।’
জাকারবার্গ সিনেটরদের বলেন, ‘ইন্টারনেট শুরু হওয়ার পর থেকে শিশুদের নিরাপদে রাখাটা প্রথম থেকে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অপরাধীরা তাদের কৌশল বদলেছে। আমাদেরও প্রোডাক্টের সুরক্ষা বদলাতে হয়েছে।’
মার্ক জাকারবার্গ স্বীকার করেন, ‘সমীক্ষায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ।’
এ সময় টিকটকের সিইও শাও জি চিউ বলেন, ‘আমার তিনটি সন্তান আছে। আমি জানি, যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা খুবই ভয়ের এবং প্রতিটি বাবা-মায়ের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো।’
শাও জি চিউ আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও মানুষের আস্থা ফেরাতে ২০০ কোটি ডলার খরচ করা হবে। চলতি বছরেই আমাদের ৪০ হাজার কর্মী সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন।’
ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটাও জানিয়েছে, তাদের ৪০ হাজার কর্মী অনলাইন সুরক্ষার বিষয়টা নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৬ সালে থেকে তারা দুই হাজার কোটি ডলার এর জন্য খরচ করেছেন।
মেটার কাছেই ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মালিকানা আছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিশোর ও সদ্য যুকদের কাছে অচেনা জায়গা থেকে কোনো বার্তা পাঠানো হলে, তা ব্লক করা হবে। এ ছাড়া ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে কিশোরদের কনটেন্টের ওপর আরও কড়াকড়ি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।