জিম্মি উদ্ধারে গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান
হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের অবস্থান শনাক্ত করার জন্য যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজার একটি হাসপাতালে সেনা পাঠিয়েছে ইসরায়েল। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ কারণে হাসপাতাল কার্যক্রম পরিচালনা করা ‘অসম্ভব’ হয়ে পড়েছে।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের চারপাশে ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে কয়েকদিন ধরে তীব্র লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এ অভিযান চালানো হয়। গাজার দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি হাসপাতাল এখনও চালু রয়েছে।
ইসরায়েল বলেছে, রোগী ও কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ‘কোনো বাধ্যবাধকতা’ না দিয়েই একটি ‘সুনির্দিষ্ট ও সীমিত পরিসরে অভিযান’ চালাচ্ছে তারা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিসহ বেশ কয়েকটি উৎস থেকে গ্রহণযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইসরায়েলের ধারণা ছিল, হামাস খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে জিম্মিদের রেখেছে। এ ছাড়া সেখানে আমাদের জিম্মিদের মরদেহ থাকতে পারে।’
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কয়েক হাজার লোক যারা রোগীসহ হাসপাতালটিতে আশ্রয় নিয়েছিল। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নাসের হাসপাতালের পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে অভিহিত করেছে। ঝুঁকির কারণে কর্মীরা মরদেহ মর্গে স্থানান্তর করতে পারেনি।
মেডিকেল দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) বৃহস্পতিবার সকালে গোলাবর্ষণের পরে হাসপাতালে একটি ‘বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে। এতে একাধিক লোক নিহত ও আহত হয়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি।
এমএসএফ বলেছে, ‘রোগীদের ফেলে রেখে আমাদের চিকিৎসাকর্মীরা হাসপাতাল থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। একজন কর্মীর খোঁজ নেই এবং আরেকজন ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নাসের হাসপাতালকে ‘পুরো গাজার জন্য’ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বর্ণনা করে বলেছে, এই এলাকায় শুধু সীমিত সংখ্যক হাসপাতাল, এমনকি সেগুলো আংশিকভাবে চালু আছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় হামাস আনুমানিক ২৫০ জন জিম্মি করে। কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে নভেম্বরে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ইসরায়েল বলছে, গাজায় জিম্মিদের মধ্যে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ২৮ হাজার ৬৬৩ জন নিহত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘সম্পূর্ণ বিজয়ের জন্য জনাকীর্ণ শহর রাফাতে একটি শক্তিশালী’ অভিযানের ঘোষণা দেয়ার পর বৃহস্পতিবার ইসরায়েল দক্ষিণ গাজায় আরও ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ লোক মিসরীয় সীমান্তের কাছে রাফাহতে অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় খুঁজছে। শহরটি এখন গাজার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি লোকের আশ্রয়স্থল।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবারও নেতানিয়াহুকে ফোনে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে রাখার পরিকল্পনা ছাড়া রাফাহ অভিযান শুরু করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। এ ছাড়া ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ড ইসরায়েলকে শহরটিতে স্থল অভিযান না চালানোর জন্য সতর্ক করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক নেতানিয়াহুকে টেলিফোনে বলেন, রাফাহতে সামরিক আগ্রাসনের সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক মানবিক প্রভাব নিয়ে ব্রিটেন ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। তার কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
কায়রোতে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা তৃতীয় দিনে প্রবেশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধ থামানোর জন্য একটি চুক্তির মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে এবং ইসরায়েলের হাতে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্ত করতে চায়।
সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য ইসরায়েলে অঘোষিত সফর করেছেন। বার্নিয়া গত মঙ্গলবার কায়রোতে বিল বার্নস এবং মিসর ও কাতারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। হামাসের একটি প্রতিনিধিদল বুধবার কায়রো সফর করেছে।
আলবেনিয়া সফরে থাকাকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, একটি চুক্তি এখনও সম্ভব। তিনি বলেন, ‘আমরা এটির ওপর খুব মনোযোগী এবং আমি বিশ্বাস করি, এটি সম্ভব।’
জিম্মিদের পরিবার নতুন বন্দি বিনিময়ে রাজি হওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।