সাংবাদিকদের আয়কর কে দেবে : মালিকদের বক্তব্য শুনবেন আপিল বিভাগ
সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর মালিক নাকি সাংবাদিকরা দেবেন—এ বিষয়ে নিউজ পেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য শুনবেন আপিল বিভাগ।
আগামী ২১ এপ্রিল আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। এ মামলায় নোয়াবকে পক্ষভুক্ত করে আজ রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট দিদারুল আলম দিদার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
গত বছরের ২৪ জুলাই সংবাদপত্রের সাংবাদিক ও কর্মচারীদের নবম ওয়েজবোর্ডে গ্র্যাচুইটি ও আয়কর সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত না করে আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন। সেদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান (জামান)। রিট পিটিশনার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. কাজী আকতার হামিদ। তার সঙ্গে ছিলেন দিদারুল আলম দিদার।
ড. কাজী আকতার হামিদ বলেন, ‘সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের আয়কর ও আনুতোষিক সংক্রান্ত দুটি সুপারিশের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। ফলে সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর আগের মতোই কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে। পরে হাইকোর্ট রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষে একটি আবেদন দাখিল করা হয়। তারা আবেদনে হাইকোর্ট রায়টি স্থগিত চান। আমরা আদালতকে বলেছি—সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের আয়কর ও আনুতোষিক বিষয়ে ইতোপূর্বে আপিল বিভাগের রায় রয়েছে। সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের আয়কর ও আনুতোষিক নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন।’
ড. কাজী আকতার হামিদ জানান, সাংবাদিকদের বেতনের অনুকূলে যে আয়কর হয়, তা মালিকপক্ষ বা কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের প্রান্তিক সুবিধা (প্রিঞ্জ বেনিফিট) হিসেবে সব সময় পেয়ে এসেছেন। এটি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে রায় রয়েছে। আর বছরে মূল বেতনের সমান দুটি আনুতোষিক বা গ্র্যাচুইটি পাবেন বাসসের সাংবাদিক-কর্মচারীরা, এটি বাসস রুলসে নিশ্চিত রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। এ বোর্ড অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা-পরামর্শের পর ‘নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ’ চূড়ান্ত করে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর তা তথ্য মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করে। ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করে সরকার।
ওই প্রজ্ঞাপনের সপ্তম অধ্যায়ের ৩ নম্বর শর্তে বলা আছে, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীদের বেতনের ওপর আরোপিত আয়কর সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদেয় হবে।’
একই অধ্যায়ের ৭ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীরা প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশ বিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত দুই মাসের মূল বেতনের সম পরিমাণ অর্থ গ্র্যাচুইটি হিসেবে প্রাপ্য হবেন।’ অথচ প্রজ্ঞাপনে ‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, কার্যকরণ ও প্রয়োগ’ শিরোনামের দ্বাদশ অধ্যায়ের ৪ নম্বর শর্তে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, সাংবাদিক, কর্মচারীদের নিজেদের আয় থেকে আয়কর পরিশোধ করবেন এবং বছরে মূল বেতনের সমান একটি গ্র্যাচুইটি পাবেন।
নবম ওয়েজবোর্ডের মন্ত্রিসভা কমিটির এই সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুজ্জামান। তখন রিটটির প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২৫ নভেম্বর আদালত রুল জারি করেন।
রুলে আয়কর ও গ্র্যাচুইটি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্যসচিব ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সে রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর সুপারিশ দুটিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।