পিলখানা হত্যা মামলার বিচার আজও কেন বিলম্বিত, প্রশ্ন বিএনপির
রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মামলায় বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘মামলার বিচারকার্য আজ পর্যন্ত কেন বিলম্বিত হচ্ছে? বাংলা ভাষায় একটি কথা আছে, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। ইংরেজি ভাষায় একটি কথা আছে, যদি বিচার বিলম্বে হয়, তাহলে সেই বিচারের মূল্য থাকে না।’
আজ রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরাস্থানে পিলখানার শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ড. মঈন।
আব্দুল মঈন খান বলেন, “যে বিচারের কথা আমরা শুনেছি, সেই বিচার হয়েছে, সেই বিচার কি হয়নি? সেই বিচারে আপিল হয়েছে, সেই আপিলের শুনানি আজকে ১৫ বছর পার হয়েছে। তার পরবর্তীতে ২০১১ সালে আরেকটি বিস্ফোরক মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলার বিচারকার্য আজকে পর্যন্ত কেন বিলম্বিত হচ্ছে? একটি কথা আছে আমাদের বাংলা ভাষায়, ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’। ইংরেজি ভাষায় একটি কথা আছে, যদি বিচার বিলম্বে হয়, তাহলে সেই বিচারের কোনো মূল্য থাকে না। কাজেই আজকে আমরা শুনেছি, সেই বিচার প্রক্রিয়া এখনও ঝুলে আছে। কেন ঝুলে আছে? কেন সেই অভিযোগে যাদেরকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে, তারা আজকে পর্যন্ত বিনাবিচারে কারাবাস করছে?”
ড. মঈন খান বলেন, ‘একটি জাতির ইতিহাসে এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা কোন জাতির ইতিহাসে কখন ঘটেছে, আমাদের জানা নেই। আজকে আমরা শুধু একটি কথাই বলব, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক যেন সুশাসনের মাধ্যমে, আইনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পান, আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি। অপরাধী শাস্তি পাবে সে সম্বন্ধে আমাদের কিছু বলার নেই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা যে আইনের ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি, তার ওপরের ভিত্তি করে বাংলাদেশের প্রোসপোডেন্স এবং জাস্টিস সিস্টেম দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে একটি কথা বলা আছে, কোনো দোষী ব্যক্তি যদি আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে যায়, সেটা হতে পারে না। কিন্তু একজন নির্দোষ ব্যক্তিও যেন কখনো শাস্তি না পায়। আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি, সেই নীতিতে বিশ্বাস করে আমরা আজকে বিডিআরের দুঃখজনক ট্র্যাজেডির প্রতিটি মানুষ এবং যারা এই সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত হয়েছে তাদের সুবিচার কামনা করি।’
ড. মঈন খান বলেন, ‘বিচার কাজে কখনো কোনো ইন্টারফেয়ারেন্স (হস্তক্ষেপ) করা যুক্তিযুক্ত নয়। এটা বিচারাধীন বিষয়। আমাদের যারা বিচারক রয়েছেন, তাদের যে নীতি সেই নীতিতে অবিচল থেকে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে এই বিষয়টি অতি দ্রুত সুরাহা করবেন, আজকে ১৫ বছরের পরে হলেও, আমরা সেই প্রত্যাশা করি।’
ড. আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল বনানীর সামরিক কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। এই সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহি আকবর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল জয়নাল আবেদীনসহ তৎকালীন বিডিআরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের কতিপয় বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সদস্যদের হাতে নিরস্ত্র সেনা সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের ১৫তম শাহাদাত বার্ষিকীতে নিহতদের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার হত্যা মামলায় ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৪২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।