‘বিচারাধীন বিষয়ে কার্যক্রম নৈতিকতার পরিপন্থী’
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন ও নাগরিকদের কাছ থেকে পুলিশের তথ্য সংগ্রহের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কার্যক্রম পরিচালনা করাটা নৈতিকতার পরিপন্থী ও আদালত অবমাননার শামিল বলে মনে করেন কয়েকজন আইনজীবী। তবে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
গতকাল বুধবার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে (আঙুলের ছাপ) মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনের বিষয়ে দায়ের করা রিটের চূড়ান্ত শুনানির জন্য আগামী ৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি শাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।
অপরদিকে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করতে পুলিশ আইন ২০০৬-এর ৪ বিধিমালা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি শেখ আখতার-উল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যেহেতু রুলে স্থগিতাদেশ দেননি আদালত, এতে উক্ত কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো বাধা নেই। তবে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে রুল নিষ্পত্তি পর্যন্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখা উচিত।’
ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একটি প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে যে, আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে কর্মকাণ্ড চালু রাখা হচ্ছে যা আদালত অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। ধরুন, আপনি আদালতে মামলা করলেন-রাজউক যেন অবৈধভাবে আপনার মালিকানাধীন ইমারত ভেঙে ফেলতে না পারে। আদালত রুল ইস্যু করলেন। এই রুল নিষ্পত্তি না হওয়ার আগেই রাজউক আপনার ইমারত ভেঙে দিল। সে ক্ষেত্রে আপনি মামলায় জিতলেও কোনো ফল হবে না। অর্থাৎ আপনার মামলা করে কোনো লাভ হলো না এবং আদালতকে বুড়ো আঙুল দেখানো হলো। এ রকম চলতে থাকলে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।’
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আদালতে মামলা করে দিলে কার্যক্রম বন্ধ হয় না। চলমান কোনো কার্যক্রম বন্ধ করতে হলে আদালত থেকে তাৎক্ষণিক স্থগিতাদেশ নিতে হয়। যেহেতু বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন বন্ধ করতে আদালতের স্থগিতাদেশ নেই, তাই কার্যক্রম বন্ধ করার কোনো অবকাশ নেই।’
এ বিষয়ে রিটকারীর আইনজীবী অনিক আর হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিচারধীন থাকা অবস্থায় কার্যক্রম পরিচালনা করা নৈতিকতা পরিপন্থী।’
‘আদালত সিম নিবন্ধন বন্ধের পক্ষে রায় দিলে এরই মধ্যে যারা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে ফেলেছেন তাঁদের কী হবে?’ এমন প্রশ্নের জবাবে অনিক আর হক বলেন, ‘ইংল্যান্ডে এ রকম একটি মামলায় হয়েছিল। পরে আদালত রায়ের মাধ্যমে নিবন্ধনকারীদের তথ্য ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন। এখানেও সে রকম আদেশ হতে পারে।’
গত ৯ মার্চ হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত রিট করেন আইনজীবী এস এম এনামুল হক। গত বছরের ২১ অক্টোবর বায়োমেট্রিক পদ্ধতির পরীক্ষামূলক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। পরে ১৬ ডিসেম্বর এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে এই নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।