গরমে শিশুদের ত্বকের যত্নে করণীয়
গরমে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা হয়। তবে এই সময়টায় একটু সতর্ক হলে এই সমস্যাগুলো এড়ানো যায়। এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৪৪ পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. মো. রেজা বিন জায়েদ।
প্রশ্ন : গরমের এই সমসয়টায় শিশুরা সাধারণত ত্বকের কী কী সমস্যার মুখোমুখি হয়?
উত্তর : শিশুদের ক্ষেত্রে ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়। গরমকালে গরমের পাশাপাশি এই সময়ে আর্দ্রতা হয়, উভয়ই শিশুদের ত্বকে প্রভাব সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন : তাতে ত্বকের কী সমস্যা হয়?
উত্তর : ত্বকের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। আর্দ্রতা বাড়লে সাথে অতিরিক্ত ঘাম হতে থাকে। আর্দ্রতা বাড়ার ফলে সেই ঘামগুলো সহজে শুকায় না। তখন ত্বকে সেটা জমা হয়ে থাকে। এই অতিরিক্ত ঘাম জমার ফলে নানা ধরনের সংক্রমণের প্রবণতা থেকে যায়। যেকোনো ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হতে পারে।
প্রশ্ন : আরেকটি বিষয় হলো ঘামাচি। এটার সঙ্গে কি গরমের সম্পর্ক আছে?
উত্তর : অবশ্যই। কারণ গরমের সঙ্গে সঙ্গে ঘামাচি অনেকেরই হয়। বাচ্চাদের অতিরিক্ত হয়। আর বড়দের চেয়ে বাচ্চাদের ঘামাচি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
প্রশ্ন : এটা কেন?
উত্তর : এর কারণ হলো বাচ্চাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বেশি ঠান্ডায় রাখা হয় না। অভিভাবকরা ভাবেন বেশি ঠান্ডায় রাখলে শিশুদের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই শরীরে কিছু একটা জামাকাপড় পরিয়ে রাখা হয়। তা ছাড়া বাচ্চাদের শরীরের যে চর্বি রয়েছে, তা বড়দের তুলনায় একটু বেশি। যার জন্য এই চর্বি থাকার কারণে খুব সহজে অল্প গরমে তাদের শরীরে ঘামাচি হয়। আবার অতিরিক্ত সতর্কতাও একটা কারণ। দেখা যায়, রাতে বেশ সতর্কতার সঙ্গে কাপড়চোপড় দিয়ে বাচ্চাদের ঢেকে রাখা হয়।
প্রশ্ন: এই ঢেকে রাখার সঙ্গে আরেকটি বিষয় জানতে চাইব ডায়াপারের বিষয়টি। বিশেষ করে শহুরে বাচ্চাদের বেলায় এই প্রবণতা খুব বেশি। তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়াপার পরিয়ে রাখে। ত্বকে ডায়াপারজনিত কোনো সমস্যা হতে পারে কি না?
উত্তর : আসলে ডায়াপারের বিরুদ্ধে আমরা সব সময়। কারণ ডায়াপার মোটা একটা কাভার এবং এটি এমন জায়গায় পরানো হয়, যেই অংশটা বেশি গরম সহ্য করতে পারে না। শরীরের অন্যান্য জায়গার তুলনায় এই জায়গাটায় আরেকটু ঠান্ডা এবং বাতাস লাগার দরকার। তা না হয়ে ডায়াপার দিয়ে বদ্ধ করে রাখা হয়। উপরন্তু ডায়াপারে ভেতরে বাচ্চারা প্রস্রাব করে দেয়। প্রস্রাবের কারণে ভেজা ভাবটা আরো বেশি হয়। তখন এই ডায়াপারের ভেজাভাব, আর্দ্রতা এবং এঁটে থাকা গরম সব মিলিয়ে ওই জায়গায় প্রতিক্রিয়া হয়। এটাকে বলা হয় ডায়াপার র্যাশ। এখানে কখনো কখনো ফাঙ্গাশ সংক্রমণ হয়। দেখা যায়, ওই জায়গাটা অনেক লাল হয়ে গেছে। এটি জ্বালাপোড়া করে, চুলকায়, তখন বাচ্চা বিরক্ত করে। আর যদি ছত্রাক দিয়ে আক্রান্ত হয় তখন বাচ্চাটি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন : একজন বাচ্চার এ ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসকের কাছে কখন যাবে এবং যাওয়াটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর : যখনই অভিভাবকরা ডায়াপার খুলবেন, তখন দেখবেন ওই জায়গাটা লাল হয়ে যাচ্ছে। এই লালের পরিমাণটা আস্তে আস্তে অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। তখনই বুঝতে হবে, এখানে কোনো সমস্যা আছে। আর যখনই বাচ্চা ডায়াপার পরা অবস্থায় বিরক্ত করা আরম্ভ করে, তখন বুঝবেন এই সমস্যার সঙ্গে আরো কিছু উপসর্গ এসে গেছে। চুলকাচ্ছে, অথবা জ্বালাপোড়া করছে, যার জন্য বাচ্চা কান্নাকাটি করছে। বাচ্চাকে ডায়াপার পরাতে গেলে সে পরতে ইচ্ছুক না, তখন বুঝতে হবে তার কোনো কষ্ট হচ্ছে।
প্রশ্ন : ডায়াপারের কারণ ছাড়াও যদি অন্য কোনো স্থানে লালচে হয়ে যায় বা র্যাশ ওঠে তখন কখন দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিত?
উত্তর : আসলে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার ত্বকের কোনো পরিবর্তন আসছে কি না। যেকোনো ত্বকের পরিবর্তনই চর্মরোগের পূর্বলক্ষণ। এই পরিবর্তন যদি কিছুদিন স্থায়ী থাকে এবং ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ না থাকে, তাহলে এই চর্মরোগে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এটি ক্রনিক অসুখের দিকে মোড় নিচ্ছে।
আমাদের অভিজ্ঞতা, যখন ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে গোল চক্রাকারে একটি লাল বিষয় থাকে। সেই লাল জায়গাটি আস্তে আস্তে ফোসকা পড়তে থাকে। পানি ঝরতে থাকে। শেষপর্যন্ত এটি সংক্রমণে রূপান্তরিত হয়, যেখানে অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এবং ঠিকমতো যদি চিকিৎসা না হয় তবে সমস্ত শরীরে এই সংক্রমণটা ছড়িয়ে যায়।
প্রশ্ন : যদি ঠিকমতো এর চিকিৎসা না করা হয় তবে ত্বকের রোগ থেকে তার অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে কি?
উত্তর : এই সংক্রমণগুলো দেহের ভেতরেও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যেতে পারে। বাচ্চার জ্বর হতে পারে। সংক্রমণজনিত বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেকোনো জায়গায় সংক্রমণ হতে পারে। কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে, যা আক্রমণ করলে শুধু ত্বকের ভেতরেই থাকে। আর কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে, যা হলে ত্বক ভেদ করে দেহের ভেতরেও হতে পারে।
প্রশ্ন : ছোট্ট সোনামণিরা যেন গরমে ত্বকের সমস্যায় আক্রান্ত না হয় সেজন্য আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
উত্তর : খোলামেলা থাকতে হবে। এর মানে এই নয় যে, কাপড় পরবে না। কাপড় পড়বে, তবে সুতির পাতলা কাপড় পড়তে হবে। ডায়াপারের ব্যবহার যতটুকু পারা যায়, বন্ধ করে ফেলতে হবে। গরমে অবশ্যই ভালো ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে যেসব জায়গায় বেশি ঘামে গলা, বোগল, কুচকি এসব জায়গায় দিতে হবে। তাতে বাচ্চারা খুবই আরামে থাকবে। ঠান্ডা পরিবেশে রাখতে হবে। গোসল নিয়মিত করতে হবে।