৩৪ মাসে নিম্ন সূচকের রেকর্ড ডিএসইতে, কমেছে মূলধনও
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারের (১৪ মার্চ) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত ৩৩ মাস ১৯ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন পয়েন্টে অবস্থান করেছে। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দরপতন হয়েছে। বাজারে মূলধন পরিমাণ কমেছে ৩২ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। তবে, বেড়েছে লেনদেন পরিমাণ। লেনদেন ৫০০ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে।
স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইট অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডিএসইতে লেনদেন শুরুতে শেয়ার কেনার চাপ ছিল। এতে শুরুটা সূচক উত্থান শুরু হয়। লেনদেন শুরুর প্রথম ১৪ মিনিটে ডিএসইএক্স উত্থান হয় ৩৫ পয়েন্ট। সেই সময় ডিএসইএক্স অবস্থান করেছিল ছয় হাজার ৯ পয়েন্টে। পরে সূচক কমা মুখিতে ফিরে। লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স পতন ছয় পয়েন্ট।
এদিক, ডিএসই দিনের শুরুটা সূচক উত্থান থাকলেও কিছুক্ষণের পর তা পতন ফিরে। এতে ডিএসইএক্স পাঁচ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে নেমে আসে। এ ধরনের কম পয়েন্টের সূচক গত ৩৩ মাস ১৯দিনের মধ্যে দেখেনি বিনিয়োগকারীরা। এতে অনেক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে শেয়ার বিক্রি না করার আহ্বান জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, আরও পতন হবে, এমন গুজব ছড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করতে চাচ্ছে একটি চক্র। তাদের (চক্র) ইচ্ছে, পতন ভয়ে যেন কম দরে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রয় করে। তাই এমন অবস্থায় বুঝে ও বিশ্লেষণে শেয়ার কেনাবেচার পরামর্শ দেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয় ৫১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস বুধবার লেনদেন ৪৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এদিন পুঁজিবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৬৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস বুধবার বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৩২ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার। একদিনে ব্যবধানে বাজারে মূলধন কমেছে ৩২ হাজার ৮৫১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আজ সূচক ডিএসইএক্স ছয় দশমিক শূন্য ছয় পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৯৬৮ দশমিক শূন্য চার পয়েন্টে। এর আগে ২০২১ সালের ২৫ মে সূচক ডিএসইএক্স পাঁচ হাজার ৮৮৪ পয়েন্টে নেমেছিল। এদিন ডিএসইএস সূচক এক দশমিক শূন্য দুই পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৯৯ দশমিক ৮০ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএস৩০ সূচক চার দশমিক ৯৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫১ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৫টির ও কমেছে ১৭১টির। শেয়ারদর পরিবর্তন হয়নি ৫৮টির।
আজ লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে গোল্ডেন সনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেন শীর্ষ উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এসএস স্টিলের ২৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, ফু-ওয়াং সিরামিকের ১৭ কোটি ২২ লাখ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশনের ১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, লাভেলো আইসক্রিমের ১৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা, গোল্ডেন হারভেষ্ট এগ্রোর ১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমসের ১২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, কর্ণফুলি ইন্স্যুরেন্সের ১২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, ফরচুন সুজের ১০ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং সেন্ট্রাল ফার্মার ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে আজ। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দরপতন হয়েছে। কমেছে বাজারে মূলধন পরিমাণ। তবে, বেড়েছে লেনদেন।
স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইট অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিএসইতে লেনদেনের শুরুতে প্রধান সূচক উত্থান হয়। লেনদেন শুরুর প্রথম এক ঘন্টা চার মিনিটে প্রধান সূচক সিএএসপিআই উত্থান ৫৩ পয়েন্ট। সেই সময় সিএএসপিআই সূচক অবস্থান করেছিল ১৭ হাজার ১৪৩ পয়েন্টে। পরে সেই সূচক পতনে অবস্থান নেয়। লেনদেন শেষে প্রধান সূচক সিএএসপিআই পতন ১৫ পয়েন্ট।
সিএসইতে বৃহস্পতিবার ১৩ কোটি ৯৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আগের কর্মদিবস বুধবার লেনদেন হয়েছিল ১১ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ২৫ হাজার ৭৫০ কোটি তিন লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস বুধবার বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ২৬ হাজার ২৬২ কোটি ২০ লাখ টাকা। সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৫ দশমিক শূন্য সাত পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৯০ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই৫০ সূচক দশমিক ৫৫ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৩৬ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৯ দশমিক ২৪ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক দুই দশমিক ১২ পয়েন্ট কমেছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৮৫টির এবং কমেছে ৮৯টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ৩৮টির।
আজ লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেন শীর্ষ উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরএন স্পিনিংয়ের এক কোটি ৫১ লাখ টাকা, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স ৭৯ লাখ টাকা, গোল্ডেন হারভেষ্ট এগ্রোর ৭২ লাখ টাকা, পূবালি ব্যাংকের ৬৭ লাখ টাকা, এসএস স্টিলের ৫৪ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্সের ৪৪ লাখ টাকা, এলআর বিডির ৩৬ লাখ টাকা এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ২৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।